ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিজয় দিবস উদযাপন
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সেক্রামেন্টো সংশ্লিষ্ট শহরসমূহের অধিবাসী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন স্যাক্রামেন্টো এরিয়া বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন (সাবা)-এর উদ্যোগে বাংলাদেশের ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ডেভিস শহরের হারপার জুনিয়র হাইস্কুলের অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী বিজয়মেলা এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
আনন্দঘন সফল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক সাবা-র সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত নূরানির আহ্বানে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে বিজয় দিবসের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাবা-র প্রেসিডেন্ট হাফিজুর চৌধুরী সোহেল। শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর সাবা-র ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট মোজাম্মদ ইসলাম জিয়া সাবা-র কার্যকরী সদস্যবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় মেলার উদ্বোধন করেন।
বিজয় মেলায় স্থানীয় অধিবাসীগণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা, নারিকেলের নাড়ু, চটপটি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানি, মিষ্টি, শাড়ি, গহনা এবং অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে স্টল পরিবেশন করেন। সফলতার সঙ্গে বিজয় মেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কোষাধ্যক্ষ ফারশিদ হক।
শীতের আমেজে দেশীয় খাবারের পসরায় প্রবাসীরা হাজার মাইল দূরে থেকেও নিজেদের যেন খুঁজে পেয়েছিল দেশ মাতৃকার কোলে। পাখির কলতানের সঙ্গে ছোট্ট শিশুদের পরিবেশনায় রবি ঠাকুরের ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি’ দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা ছিল একটি দীর্ঘ ফ্ল্যাশ-মব এর অংশ।
এরপরই একদল শিশুশিল্পী গেয়ে উঠে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের চল চল চল, সঙ্গে ছিল তাদের কোরিওগ্রাফি। স্থানীয় শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং একজন শিশুশিল্পীর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ফ্ল্যাশ-মব এর সমাপ্তি হয়। সংগীত, আবৃত্তি, বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং অর্জন নিয়ে স্কিড এবং নৃত্যের তালে সাজানো হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।
সাবা-র জেনারেল সেক্রেটারি হূমায়রা সাবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জমকালো মঞ্চ পরিকল্পনার সমন্বয় করেন। এতে সহযোগিতা করেন আব্দুল্লাহ, জিসান, রানা, সাইদ, তন্ময়, শুভ্রসহ আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবী।
বিজয় দিবসের আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতি বছর বৃহত্তর সেক্রামেন্টো অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মাঝে কমিউনিটির কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাবা বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে থাকে। দীর্ঘদিন যাবত কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থেকে সেবা প্রদান করার জন্য এই অঞ্চলের অতি পরিচিত মুখ বিশিষ্ট সমাজসেবক প্রকৌশলী সালাম খানকে এ বছর এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য যে এই বিশেষ সম্মাননা প্রদানের সঙ্গে ডা. মেশকাত উদ্দিন ও ডা. পারভীনের পারিবারিক উদ্যোগ ‘উদ্দিন ফ্যামিলি ফান্ড’ থেকে যৌথভাবে আর্থিক সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে।
তীব্র শীতের চাদরে ঢাকা রৌদ্র ঝলমল দিনে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে সংগঠনটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বেশ সাড়া পায়। ৫২তম বিজয় দিবস ছিল সাবা-র পঞ্চম বছরের সফল উদযাপন। বছরের এই দিনটিতে সবাই একত্রিত হতে পেরে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটিকে প্রবাসীগণ আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানায়।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাবা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন প্রয়োজন যেমন, কনস্যুলেট সেবা প্রদান, ক্যারিয়ার সার্চ ওয়ার্কশপ, ঈদ উদযাপন, ফ্রি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার মেডিক্যাল সার্ভিস, কলেজ শিক্ষার্থী ওয়ার্কশপ, ক্যাম্পিং ইত্যাদির আয়োজন করে আসছে। তাছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত বিভিন্ন অঞ্চলে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে ২০২২ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গংগাচড়ার ২২ পরিবারের মাঝে গবাদিপশু বিতরণ এবং অন্যান্য পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। সংগঠনটি উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে ইতোমধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য আসন করে নিয়েছে।
এমজেইউ