আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও বর্তমান অস্থিরতা নিয়ে দেশের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নির্বাচনে উভয়ের পূর্ণ জনসমর্থন রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি বোঝা কষ্টকর জনগণ আসলে কোন দলকে সমর্থন করছে। বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমত এবং সমালোচনার ওপর সরকারের নানা পদক্ষেপে জনগণের কী ভাবনা– তা বোঝা বেশ কঠিন। তবু আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবছেন আমিরাতে বসবাসরত দুই দলের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য বর্তমান সরকার দায়ী বলে মনে করছেন আমিরাত বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল বা ঘরে ঘরে চাকরির মতো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশ ও জনগণের সঙ্গে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছেন। জনগণ আর এ সরকারকে চায় না, তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তারা রাজপথে নেমেছেন বলে জানান বিএনপি নেতারা।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপিতে সরকার প্রধান হওয়ার মতো কোনো নেতা নেই। গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে আসছে। তারা বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আরও সক্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা মেনে নিতে পারছে না বিএনপি। আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতা করে এবং পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপির সরকার পতনের ষড়যন্ত্র কোনোদিনই সফল হবে না।

নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, দেশের মতো প্রবাসেও এই আলোচনা-সমালোচনা আরও গভীর হবে। তবে শেষ মুহূর্তে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ প্রবাসীরা।

আমিরাত আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা আইয়ুব আলী বাবুল বলেন, বিএনপি দেশে আন্দোলনের নামে নাশকতা করছে, অথচ তাদের নিজেদের মধ্যেই গন্ডগোল রয়েছে। তারা জনগণের কাছে যাচ্ছে কিন্তু তাদের নেতা কে? তারা নির্বাচিত হলে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে? তাদের এমন কোনো নেতা নেই যাকে দিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। ১৫ বছর ধরে বিএনপি মিথ্যার ওপর মিথ্যাচার করে আসছে। মিথ্যার ওপর নোবেল দেওয়া হলে মির্জা ফখরুলকে দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ নেতা।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে মনে করেন এ নেতা।

দুবাই আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার আহমেদ বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আরও সক্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা মেনে নিতে পারছে না বিএনপি। আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতা করে এবং পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপির সরকার পতনের ষড়যন্ত্র কোনোদিনই সফল হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও জয়যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান আওয়ামী লীগের এ নেতা।

আমিরাত বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য দায়ী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। একসময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ ১৯৬ দিন হরতাল করেছিল। এমনকি তারা জামায়াতকে নিয়েও আন্দোলন করেছে। একপর্যায়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আইন পাস করেছিল। বিগত সময়ে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো কম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আজ দেশের জনগণও বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। প্রধানমন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানান বিএনপির এ নেতা।

আমিরাত বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক শরাফত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ টাকায় চাল বা ঘরে ঘরে চাকরির মতো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশ ও জনগণের সঙ্গে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছেন। জনগণ আর এ সরকারকে চায় না, তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজ জনগণ রাজপথে সংগ্রাম করছে।

এসএসএইচ