নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ইতালির ভেনিস আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষে হয়েছে। ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সাংগঠনিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে পাতানো সম্মেলন করার অভিযোগ করেছেন ভেনিসের একাধিক নেতাকর্মী।

তারা বলছেন, সম্মেলনের আলোচনা শুরু হয় একটি উৎসবমুখর পরিবেশে। হঠাৎ করে সম্মেলন ঘোলাটে হতে থাকে। এরপর সম্মেলনের হল রুমে হৈ-হুল্লোড় বেঁধে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আলোচনা চলতে থাকে।

ভেনিসের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সভাপতি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে, এতে কারো কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচন করতে কেন ভোটের দিকে না গিয়ে সিলেকশনে চলে গেলেন– নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রউফ ফকির, হাজী জসীম উদ্দিন ও শাহ আলমের উদ্দেশে এ প্রশ্ন তোলেন নেতাকর্মীরা। এ কারণে সম্মেলনে সম্পাদক পদ নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। নেতাকর্মীরা বারবার অভিযোগ করেন, একটি সুন্দর পরিবেশে সভাপতি ভোটে জয় লাভ করেছেন, তাহলে সম্পাদক পদে ভোটাভুটি দিতে সমস্যা কোথায়?

তৃণমূল নেতাদের প্রশ্নও একই, সম্মেলনে ভোটের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে একজন ভোটে জয় পেয়েছেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করতে কেন ভোটে না গিয়ে সিলেকশনে গেলেন নির্বাচন কমিশনাররা?

এ নিয়ে শুরু হয় কানাঘুষা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেনিস আওয়ামী লীগের এক নেতা অভিযোগ করেন, তাহলে কী আমরা ধরে নেব আর্থিক কোনো লেনদেন হয়েছে? এর ফলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচন করতে ভোটে না গিয়ে সিলেকশন করা হলো। এটা নিশ্চয়ই সাংগঠনিক অনিয়ম। তাহলে গঠনতন্ত্র কী বলে? ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের কাছে আমরা এরকমটা আশা করিনি। ভেনিস আওয়ামী লীগের কমিটি সুন্দরভাবে সাজানোর অনুরোধ করেন তিনি।

শাহাদাত হোসাইন

প্রসঙ্গত, ভেনিস আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন রফিকুল ইসলাম ছৈয়াল ও বিল্লাল হোসেন ঢালী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন মোস্তাক আহমেদ, ওমর ফারুক নিনি, ডালিম মাহমুদ ও শাহাদাত হোসাইন। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শাহাদাত হোসাইন দাবি করেন, সম্মেলনে সভাপতি পদে ভোট করার পর তার জনসমর্থন বেশি দেখে সিলেকশনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

তিনি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। পরে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসাইন বলেন, জয়-পরাজয় আমি মেনে নিতে প্রস্তুত, যদি ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত করা হতো। আমাকে তো সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। সিলেকশনে নির্বাচন করলে আমার তো জনপ্রিয়তা যাচাই করার সুযোগও থাকল না। তাই এভাবে পরাজয় খুবই লজ্জার।

তিনি দাবি করেন, মোস্তাক আহমেদের (নতুন সাধারণ সম্পাদক) সঙ্গে আমাকে ভোটের সুযোগ দিলে সেখানে পরাজয় হলেও হাসিমুখে মেনে নিতাম।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, একই সম্মেলনে সভাপতি পদের জন্য ভোট আর সাধারণ সম্পাদক পদে সিলেকশন, ভোট কেন হবে না?

সম্মেলনে সাংগঠনিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতালি আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভোটের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে মোস্তাক আহমেদকে  শাহাদাত হোসাইন ছাড়া বাকি দুই প্রার্থীর সমর্থন করায়  ভোটের দরকার হয়নি।

আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এসেছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

এ ব্যাপারে জানতে ভেনিস আওয়ামী লীগের সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার হাজী জসিম উদ্দিনকে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ১০ বছর পর গত ১১ নভেম্বর ভেনিস লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত।

এসএসএইচ