পর্তুগিজ রাজধানী লিসবনে চলা প্রযুক্তি সম্মেলন ওয়েব সামিট ২০২৩ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) শেষ হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবনী শক্তির অভিজ্ঞতা নিতে অনেক রাষ্ট্র তাদের ছোট বড় স্টার্টআপ নিয়ে হাজির হয়েছিল। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও দেশটির কোনো স্টল বা প্রতিনিধি ছিল না।

ওয়েব সামিটে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার অংশগ্রহণ করেছেন তাদের নতুন স্টার্টআপ পরিকল্পনা করার জন্য। এর মধ্যে অনেকেই তাদের স্টার্টআপ বেটা টেস্টিং পর্যায়ে রয়েছে, হয়তো খুব শিগগিরই তাদের নতুন উদ্যোগ বাজারে আসবে।

প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ দেশগুলোসহ ১৬০ টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও পাকিস্তানে নিজস্ব প্যাভিলিয়ন এবং প্রতিনিধি ছিল। অথচ আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ খ্যাত দেশটির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি সুলেমান আহমেদ।

সামিটে অংশগ্রহণ করেছিলেন ডিজিটাল নোমাদ নিরব আহমেদ। তিনি বলেন, বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করেন বলতে গেলে তাদের নিরানব্বই শতাংশই এই ওয়েব সামিটে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমান প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এখানে মূল প্রতিপাদ্য থাকে। সুতরাং ভবিষ্যতের ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ে তোলার জন্য এ ধরনের আয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। যাতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত ব্যক্তিরা এখানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। যদিও এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কোন উদ্যোগ ও চোখে পড়েনি।

অপর এক বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারী এবং ফ্রিল্যান্সার আরিফ হোসেন ফাহিম ঢাকা পোস্টেকে বলেন, এই তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে যুক্ত হওয়া শুধু মাত্র জ্ঞান লাভ বা ভোক্তা সংগ্রহ করা নয়, নতুন স্টার্টআপ-এ বিনিয়োগ সংগ্রহ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ সরকার যদি উদ্যোগ গ্রহণ করত তাহলে বাংলাদেশের শুরু হওয়া বিভিন্ন ছোট ছোট স্টার্টআপগুলো বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারত এবং এই বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে তা বলার অবকাশ নেই।

বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, ওয়েব সামিট নিয়ে বাংলাদেশে বলতে গেলে তেমন কোনো প্রচারণা নেই। সরকারের আইসিটি বিভাগ থেকে তো এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেই। এমনকি তথ্য প্রযুক্তির এত বড় সম্মেলনটি নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়ারও তেমন একটা আগ্রহ নেই।

বাস্তব ক্ষেত্রে দেখেছি ঢাকা পোস্টসহ আর মাত্র ২/৩ টি সংবাদ মাধ্যম প্রতিনিধির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ দুই হাজারের বেশি সংবাদকর্মী এই মহাসম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পর্তুগালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস লিসবনের সঙ্গে বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তি সম্মেলন ওয়েব সামিট ২০২৩ এ বাংলাদেশের অবস্থান ও অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। অর্থাৎ এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানা গেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা, নিজের দেশকে বিশ্বের মাঝে উপস্থাপন এমনকি নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসায়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ গ্রহণ করেছে বিভিন্ন দেশ। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এই অষ্টম আসরে স্বল্প কিছু হাতে গোনা বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ থাকলেও পিছিয়ে থাকল বাংলাদেশ। 

এমএ