আবাসন সংকট নিরসনে পর্তুগাল সরকার বাড়ি ভাড়ায় নগদ আর্থিক সহযোগিতা ও ঋণ ছাড়সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন আবাসন বিল অনুমোদন করেছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর দেশটির জাতীয় সংসদে বিলটি অনুমোদন করা হয়।

পর্তুগালে ২০১৫ সালের পর আবাসনের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া। শুরুতে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও ২০২১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাশীলরা একটি আবাসন মন্ত্রণালয় গঠন করে এবং এর মন্ত্রী নিযুক্ত হন মারিনা গনসালবেস। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আবাসন খাতে গুরুত্ব দিয়ে একটি নতুন বিল উপস্থাপন করেন।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর গত মে মাস থেকেই বাড়ি ভাড়ায় আর্থিক সহযোগিতা অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে জুন মাস থেকেই বাড়ি ভাড়ার ঋণ সহযোগিতার জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের মাসিক কিস্তির ওপরও ছাড় দেওয়া হয়।

জরুরিভাবে দুটি বিষয় কার্যকর করা হলেও পরে এ সংক্রান্ত আবাসন বিল পার্লামেন্টে অনুমোদন করা হয়। তারপর বিলটি পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতি মার্সেলো রেবেলো দি সজার কাছে পাঠানো হয়। তবে রাষ্ট্রপতি বিলটি অনুমোদন না করায় এটি আবার সংসদে ফিরে আসে। যে কারণে আবারও সংসদে নতুন বিলটি অনুমোদন করা হয়। সংসদীয় নিয়ম অনুযায়ী, এটি এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই আইন আকারে প্রয়োগ করা হবে।

এদিকে, পর্তুগালে লাগামহীনভাবে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করার কারণে বেশিরভাগ স্বল্প আয়ের প্রবাসী বাংলাদেশি চরম সংকটে পড়েছেন। একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে পর্তুগালে বসবাস করা কঠিন হয়ে উঠেছে। নতুন আসা অভিবাসীরা আছেন সবচেয়ে কষ্টে।

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম নামের এক প্রবাসী বলেন, সর্বনিম্ন বেতনে পর্তুগালে নিজের ভরণপোষণ করার পর বাংলাদেশে পরিবারকে পাঠানোর মতো তেমন কোনো অর্থই হাতে থাকছে না। তিন বছর আগে এক সিটের ভাড়া মাসিক ১২০ ইউরো ছিল, এখন তা ২৫০ ইউরোর বেশি।

বাংলাদেশি সাইফুল ইসলাম গত ডিসেম্বরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুইডেন থেকে পর্তুগালে এসেছেন। তাদের এক রুমের জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫৫০ ইউরো। একই অ্যাপয়েন্টমেন্টে তিনটি পরিবারের সঙ্গে তারা বসবাস করছেন। একটি রান্না ঘর পরিবারগুলো ব্যবহার করছে। ওই প্রবাসী জানিয়েছেন, তারা এক দুর্বিষহ পরিবেশে বসবাস করছেন।

পর্তুগালে নতুন যে আবাসন বিল অনুমোদন করা হয়েছে সেটিতে আবাসন খাতে আর্থিক সহযোগিতা, গোল্ডেন ভিসার অবসান, বর্তমানে খালি অবস্থায় পড়ে থাকা বাড়িগুলো মালিকের কাছ থেকে সরকার অধিগ্রহণ করে ভাড়া প্রদান করা, আবাসিক ভবনে হোস্টেল লাইসেন্স না দেওয়া এবং বর্তমানে দেওয়া লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়ন না করা এবং নতুন আবাসন তৈরিসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ বা সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো রয়েছে।

নতুন এই বিল প্রবাসীদের আবাসন সংকট কাটাতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশিরা।

/এসএসএইচ/