অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
মহান স্বাধীনতা দিবসে হেফাজতে ইসলামসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আয়োজিত হরতালের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪ জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’র আয়োজনে ও প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সারা বিশ্বের রাষ্ট্র নায়করা যখন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ঠিক তখনই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রটি অর্জিত গৌরবকে ধূলিস্যাৎ করার নীল নকশা করছে।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মাহমুদ হাসান। অংশ নেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির, সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত, ডা. জীবন দাশ, এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. বাতেন, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সাবেক ছাত্রনেতা কিরন বনিক শংকর এবং লেখক বায়াজিদ গালিব।
আলোচনায় বক্তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি অফিসে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও রেললাইনে যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে তার গভীর নিন্দা করে অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
স্বাগত বক্তব্যে উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতার নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে একাত্তরের ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তাদের হৃদয়ের দহনকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই মোদির আগমনের প্রতিবাদে প্রথমেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আগুন দিয়েছে তারা। পাকিস্তানের আজ্ঞাবহ বলেই ২৬ মার্চ নারকীয় তাণ্ডবে মেতে ওঠে, বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। অনতিবিলম্বে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে জাতিকে এর চরম মাসুল দিতে হবে।
প্রকৌশলী মো. কাদির বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত সরকারের নীরবতার সমালোচনা করে বলেন, যারা দেশের আনুগত্যে বিশ্বাস করে না, পাকিস্তানই যাদের ধ্যান-জ্ঞান তাদের প্রশ্রয় দিলে উন্নয়নের অগ্রগতি ব্যাহত হয়ে দেশ আফগানিস্তানের পথে এগোবে। পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক ঘটনার একুশ বছর পরে দেশপ্রেমিক শক্তি ক্ষমতা ফিরে ফেলেও হেফাজতের মতো উগ্রবাদীদের হাতে নিয়ন্ত্রণ গেলে শত বছরেও তা ফেরত পাওয়া যাবে না।
এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. মো. বাতেন বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত যুদ্ধের মোকাবিলায় সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানাই।
ডা. জীবন দাশ বলেন, হেফাজত ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ধ্বংস করার ধৃষ্টতা দেখায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সাবেক ছাত্রনেতা কিরন বনিক শংকর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে মোদির বিরোধিতা করতে গিয়ে নিজ দেশের জানমালের ক্ষতি কোন ধরনের প্রতিবাদ। বর্তমান সরকার কঠোর হাতে এদের দমন করতে না পারলে তার খেসারত অচিরেই দিতে হবে। আমরা দেশটাকে আবার পশ্চাৎপদ হতে দেখতে চাই না। বাংলাদেশেকে আফগানিস্তান হতে দেওয়া যাবে না।
লেখক বায়াজিদ গালিব বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও যদি মৌলবাদীদের দমন করা না যায়, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা উদগ্রীব। দেশে যতই উন্নয়ন হোক না কেন দেশকে সাম্প্রদায়িকের ঊর্ধ্বে নিতে না পারলে সে উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
এসএসএইচ