কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশান অব নোভা স্কসিয়ার (বিডিক্যান্স) উদ্যোগে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
 
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর ইতিহাসে সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি গৌরবময় দিন। যা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল ভাষা আন্দোলনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা মেলা আয়োজিত হয়। বিভিন্ন ভাষাভাষীদের স্টল ঘুরে উপস্থিত সবাই বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়। তাদের ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন। তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত হন। সবচেয়ে গৌরবময় ছিল বাংলা ভাষার স্টল। এখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য সম্পর্কে জেনে অনেক বিদেশিরা অবাক হয়ে পড়েন।

পৃথিবীর সকল জাতি ও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন স্বরূপ মিকম্যাক অধিবাসীদের আবাস-স্বীকৃতি দেওয়া হয় বিডিক্যান্সেরর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। এরপর বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। উপস্থিত সবাই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিডিক্যান্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি অভিনন্দন পত্র প্রেরণ করেন। নোভা স্কসিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর আর্থার জে. লেব্লাঙ্ক, ওএনএস, কেসি (নোভা স্কোসিয়ার সর্বোচ্চ রার্ঙ্কিং কর্মকর্তা) এবং মিসেস প্যাটসি লেব্ল্যাঙ্ক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। লেফটেন্যান্ট গভর্নর আর্থার জে. লেব্লাঙ্ক ও হ্যলিফ্যাক্সের এমপি এ্যন্ডি ফ্যিল্মোর অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাদের বক্তব্য রাখেন। নোভা স্কসিয়ার  প্রিমিয়ার টম হিউস্টনের পক্ষ থেকে মন্ত্রী বারবারা অ্যাডামস ও মেয়র মাইক স্যাভেজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।
 
অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। নোভা স্কসিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর মান্যবর আর্থার জে. লেব্লাঙ্ক ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, বাঙালির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলমের লেখা কবিতা ‘আমি বিচার চাইতে এসেছি’ আবৃত্তি করেন মাহবুবুর রহমান। আবৃতির সময় উপস্থিত সবাই ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ উপলদ্ধি করে।  অনুষ্ঠানে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘কোন এক মাকে’ কবিতাটা আবৃত্তি করেন আবজাল হোসাইন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের পরিবেশনায় সকলকেই অভিভূত। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন দীপান্বিতা দে, সৈকত ও নবনীতা, জুলেখা নুসরাত ও আরিয়ান। বিডিক্যান্সেরর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ‘স্পিকিং হোম’ দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। 
 
একুশ কেবল শোক নয়। শক্তি এবং অর্জনেরও একটি দিন। ২১ এর অন্যতম মৌলিক বিষয় ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য। শতশত বাংলাদেশির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বয়ে আনে এক প্রাণচঞ্চল পরিবেশ।

ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আত্মিক ও প্রীতিময় হতে পারে তাও বুঝিয়েছে হালিফার প্রবাসী বাংলাদেশীরা। মানুষের সম্প্রীতি আর ভালোবাসার বাঁধনকে আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে, পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন জাতিসত্তার মাতৃভাষা নিয়ে নতুন সম্ভাবনার উৎস হয়ে উঠতে পারে এই দিবসটি প্রত্যাশা করে শেষ হয় ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা।

ওএফ