ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) বিশ্বের এমন এক আঞ্চলিক জোট, যারা তাদের বাজার, অর্থনীতি ও ঐতিহ্য ভাগাভাগি করে। এ জোটভুক্ত ২৭টি দেশের ভৌগলিক কাঠামো থাকলেও তাদের মধ্যে নেই কোনো আন্তঃসীমান্ত। মূলত একক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে আর্থিক উন্নতি করাই তাদের লক্ষ্য।

ইইউতে একক অর্থনীতি চালু থাকলেও প্রতিটি দেশেরই ভৌগলিক অবস্থার মত আলাদা অর্থনৈতিক কাঠামো রয়েছে। সে কারণেই প্রতিটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ভিন্ন। অপরদিকে একক বাজার অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও একই পণ্যের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মূল্যমান রয়েছে। প্রতিটি দেশের রয়েছে ভিন্ন বেতন কাঠামো। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও বুলগেরিয়ার মাসিক বেতন ৩৩২ ইউরো, অপরদিকে লুক্সেমবুর্গের মাসিক বেতন ২২০২ ইউরো। চলুন জেনে নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মাসিক সর্বনিম্ন বেতন কত। (১ ইউরো সমান বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০২ টাকার কম/বেশি)

একেবারে নিচের দিক থেকে বিবেচনা করলে বুলগেরিয়ায় সর্বনিম্ন বেতন ৩৩২ ইউরো, হাঙ্গেরিতে ৪৪২ ইউরো, রোমেনিয়ায় ৪৫৮ ইউরো, লাটভিয়ায় ৫০০ ইউরো, ক্রোয়েশিয়ায় ৫৬৩ ইউরো, চেক রিপাবলিকে ৫৭৯ ইউরো, ইস্তোনিয়ায় ৫৮৪ ইউরো, পোল্যান্ডে ৬১৪ ইউরো, স্লোভাকিয়ায় ৬২৩ ইউরো, লিথুনিয়ায় ৬৪২ ইউরো, গ্রিসে ৭৫৮ ইউরো, পর্তুগালে ৭৭৬ ইউরো, মালটায় ৭৮৫ ইউরো, স্লোভেনিয়ায় ১০২৪ ইউরো, স্পেনে ১১০৮ ইউরো, ফ্রান্সে ১৫৫৫ ইউরো, জার্মানিতে ১৬১৪ ইউরো, বেলজিয়ামে ১৬২৬ ইউরো, নেদারল্যান্ডসে ১৬৮৫ ইউরো, আয়ারল্যান্ডে ১৭২৪ ইউরো ও লুক্সেমবুর্গে ২২০২ ইউরো।

ইতালি, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সর্বনিম্ন বেতনের হিসাব বাদ পড়েছে। কারণ এ দেশগুলোর মধ্যে বেতনের ক্ষেত্রে তারতম্য রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের ট্রেড ইউনিয়ন সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ কোন কোন দেশে অঞ্চলভেদে বেতন ভিন্ন। তাছাড়া কোন কোন দেশে সর্বনিম্ন বেতন নির্দিষ্টই করা নেই। অপরদিকে কিছু দেশে বছরে ১৪টি বেতন হিসাব করা হয়। উদাহরণস্বরূপ পর্তুগালে নির্ধারিত বেতন ৬৬৫ ইউরো কিন্তু ১২ মাসের হিসেবে গড় করলে তা ৭৭৬ ইউরো। স্পেন ও গ্রিস একই হিসেবে সংযুক্ত।

তবে সর্বনিম্ন বেতন কম হলেও গড় বেতনের দিক থেকে একটু এগিয়েই আছে সবগুলো দেশ। কেননা সর্বনিম্ন বেতন খুব কমসংখ্যক কর্মচারীদের হয়ে থাকে। যেমন ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী পর্তুগালে গড় বেতন ১৩১৪, যেখানে তাদের সর্বনিম্ন বেতন ৭৭৫ ইউরো। স্থানীয় সহজলভ্যতা, খাদ্যাভ্যাস আন্তর্দেশীয় ভ্যাট ইত্যাদি কারণে মৌলিক পণ্যগুলোর দাম অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় বেতন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পর্তুগালে যানবাহন ব্যবহারে যে ব্যয় তাদের দেশের জনগণ করে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে নেদারল্যান্ডে তার তিনগুণের বেশি ব্যয় হয়। আয়ের সঙ্গে সমন্বিত করেই ব্যয়গুলো নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ যাদের আয় বেশি তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেশি।

তবে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কর্মজীবীরা সর্বনিম্ন বেতনে চাকরি করেন। এর অন্যতম কারণ কাজের অভিজ্ঞতা ও ভাষাগত দক্ষতার অভাব। তবে কেউ যদি ইউরোপে পাড়ি জমাতে চান, সেক্ষেত্রে যদি পূর্ব প্রস্তুতি থাকে তবে খুব সহজেই একটি ভালো বেতন কাঠামো নিয়ে সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনায় নিতে হবে কোন কাজটি করবেন, ইইউতে ওই কাজের চাহিদা কেমন, সে কাজে আপনার দক্ষতা কতটুকু। পাশাপাশি যে দেশে যেতে আগ্রহী সে দেশের ভাষাগত ধারণা কতটুকু রয়েছে সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে।

এসএসএইচ