ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট : প্রবাসীদের বিপুল আগ্রহ, মান নিশ্চিতে পরামর্শ
জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা–টরন্টো সরাসরি ফ্লাইট নিয়ে কানাডা প্রবাসীদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের ঘাটতির কারণে বিমানের ফ্লাইট নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক কানাডার এভিয়েশন বাণিজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে বিমানকে আরও উন্মুক্ত ও পেশাদার হতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে টিকেটসহ মানসম্মত হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ এর আলোচনায় তারা এসব মতামত দেন।
‘বিমানের ঢাকা-টরন্টো সরাসরি ফ্লাইট নিয়ে কেন এতো প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা অংশ নেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম, বাংলাদেশে ওমান এয়ার এবং ইত্তেহাদের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার খন্দকার কবীর এবং টরন্টোর ট্রাভেল এজেন্ট সুমন জাফর।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বিমানের ঢাকা-টরন্টো সরাসরি ফ্লাইটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, অভিবাসী দেশ কানাডায় বাংলাদেশ থেকে সাধারণ নাগরিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করেন। এর বাইরে দু’দেশের মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক। রপ্তানি পণ্যেরও বড় বাজার কানাডা। সরাসরি ফ্লাইট তাদের জন্য অত্যন্ত সুখবর।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে মনে হয় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না নিয়েই বিমান তাড়াহুড়া করে ঢাকা-টরন্টো সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনায় নেমেছে। এই তাড়াহুড়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
ঢাকা-টরন্টো সরাসরি ফ্লাইট সফলভাবে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিমানকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত ও মানসম্মত সেবার বাইরেও পরিচালনাগত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বিমানকে মোকাবিলা করতে হবে। সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার কারণে বিমানকে ‘লোড প্যানাল্টি’ দিতে হবে। এ প্যানাল্টি বিমানের যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। বিমানে উচিৎ হবে যতো দ্রুত সম্ভব তৃতীয় কোনো দেশে অন্তত টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের অনুমতির চেষ্টা করা।
বাংলাদেশে ওমান এয়ার এবং ইত্তেহাদের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার খন্দকার কবীর বলেন, বিমান পরিবহন কেবল যাত্রী বা পণ্য পরিবহণেই সীমিত নয়। বিমান চলাচলের মাধ্যমে সংস্কৃতি, পর্যটনসহ অন্যান্য খাতেও সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়। সাধারণত উদ্বোধনী ফ্লাইটকে ঘিরেই এ সুযোগগুলো কাজে লাগানো হয়। কিন্তু বিমান এ ধরনের কোনো ভাবনা ভেবেছে বলে মনে হয় না।
খন্দকার কবীর বলেন, ১৮ ঘণ্টার দীর্ঘ একটি বিরতিহীন ফ্লাইটে মানসম্মত যাত্রীসেবা গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লাইটে খাবার, বিনোদনের ব্যবস্থার পাশাপাশি পুরো ১৮ ঘণ্টার ভ্রমণকে বিরক্তিহীন রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি উত্তর আমেরিকায় বিমানের এই ফ্লাইটটিকে পরিচিত এবং জনপ্রিয় করে তুলতে বিশেষ বিপণন কর্মসূচির পরামর্শ দেন।
টরন্টোর ট্রাভেল এজেন্ট সুমন জাফর বিমানের সরাসরি ফ্লাইটকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কানাডার বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে বিমানের সরাসরি এই ফ্লাইট নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে। সবাই এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
কানাডার এভিয়েশন মার্কেটের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে সুমন জাফর বলেন, বিমানের ফ্লাইটকে ঘিরে বাংলাদেশিদের আবেগ, দেশপ্রেম সত্ত্বেও বিমানকে অন্যান্য দেশের ফ্লাইটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই বাজার ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে।
নতুন একটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার আগে স্থানীয় বাংলাদেশিদের বিশেষ করে ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে বিমানের কোনো পর্যায় থেকেই কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি বলে উল্লেখ করে সুমন জাফর বলেন, স্থানীয় বাংলাদেশিরা বিমানকে সহায়তা করতে সর্বতোভাবে প্রস্তুত আছে। বিমান সহায়তা নিতে চায় কি-না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডার সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের ৯ বছর পর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান এয়ারলাইন্সের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা-টরন্টো সরাসরি ফ্লাইটের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু এ ফ্লাইট নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা, দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগ উঠছে পক্ষপাতিত্ব, অপেশাদার আচরণ ও অপচয়ের। এসব বিষয়ে বিমানের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা দেশ প্রেমের কারণে ছাড় দিয়ে হলেও বিমানকে আকাশ পরিবহনের জন্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তবে বিমানকে স্বচ্ছ তথ্য উপাত্ত ও মানসম্মত সেবা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
ওএফ