বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকারের দাবি আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে এই সময়ের আগ পর্যন্ত এত চাল আমদানি করা হয়নি। দেশ যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, তাহলে এত চাল কার জন্য আমদানি করা হচ্ছে?

তিনি বলেন, আমাদের এক মন্ত্রী বলেছেন, বিমান থেকে নিচে তাকালে ঢাকাকে লস এঞ্জেলেস মনে হয়, নিচে নামলে মনে হয় সিঙ্গাপুর। তার উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি রাজধানীর বউ বাজার বা ফকিন্নী বাজার গিয়ে ঘুরে আসুন। বাস্তব চিত্র দেখতে পাবেন। সব শ্রেণির মানুষ এখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছে, হয় মাস্কে মুখ ঢেকে নাহয় মাফলারে।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আয়োজনে বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাড‌ভো‌কেট নিপুন রায় চৌধুরীর ওপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বেড়েছে। আরও শতকরা ২০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সরকার থাকলে এই দাম আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, নিপুণ রায়কে মালাউন বলার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কিছুই করছে না সরকার। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের কারণে টিকে আছে।

নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায়। আর আমরা অংশ নিলে দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়। এই সরকার কি না করতে পারে!

নেতাকর্মীদের প্রতি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা খুব শিগগিরই দ্রব্যমূল্য হ্রাস এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নামব। আপনারা আন্দোলনে যোগ দিন। সাধারণ মানুষের প্রতিও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান থাকবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কেরানীগঞ্জের ঘটনাই প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সংখ্যালঘুরাও নিরাপদ নয়। ওই এলাকার ওসি নিপুণ রায়কে মালাউন বলেছে। যারা নিপুণ রায়ের ওপর হামলা করেছে, তাদের বাদ দিয়ে যারা নির্যাতিত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ওমিক্রনের বিধিনিষেধ নেই এখন। মানুষ আবার রাজপথে নেমে আসছে। আপনারা এখন ১৪৪ ধারা দেন। আমরা ১৪৪ ধারা তেল দিয়ে ভেজে খাব। সব দলের প্রতি আহ্বান জানাই, সামনে স্বাধীনতার মাস। স্বৈরাচারীদের হটানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নিপুন রায়ের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়েছে। সেখানকার ওসি নিপুণ রায়কে মালাউন বলেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হয়েছিল আওয়ামী লীগের সময়কালেই, ১৯৭২-৭৫ সালে। সে সময় রক্ষী বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। ঠিক একইভাবে এখন বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে পরিণত করা হচ্ছে। তাই এই সরকারের পতন ছাড়া আর কিছুই শুনতে চাই না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো নীল নকশার নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে নেমেছি। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে তারপরই ঘরে ফিরব।

বক্তারা বলেন, হুদা কমিশনের মতো আরেকটি কমিশন গঠন করে ২০১৪ সালের মতো দিনের ভোট রাতে করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পায়তারা করছে। তাদের হটাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। বারবার ঘুঘু তুমি ধান খেয়ে যাও, আর পারবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জিনজিরা এলাকায় বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে জিনজিরা বিএনপি ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে শতাধিক নেতাকর্মী বাস রোডে অবস্থান নেন। নেতাকর্মীরা নিপুণ রায়ের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ এনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতা কর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে নেতা কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করেন।

এএজে/আইএসএইচ