প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতিকে নামের যে তালিকা দেবে সেটা প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেবে ওয়ার্কার্স পার্টি। 

বৃহস্পতিবার দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পলিটব্যুরোর সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবনা সভায় আলোচনার জন্য গৃহীত হয়। 

ওয়ার্কার্স পার্টির সিদ্ধান্তে গণ-বিজ্ঞপ্তির স্থলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও যথোচিত পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে বলা হয়। ওয়ার্কার্স পার্টি অনুসন্ধান কমিটিকে তাদের তালিকা পাঠিয়ে সহযোগিতা করবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সিদ্ধান্তে বলা হয়, সংসদে এ সংক্রান্ত আইন বিবেচনার সময় পার্টির সংসদ সদস্যরা অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া নাম জনসাধারণের জন্য প্রকাশ অথবা বিকল্প হিসেবে ওই নামগুলো সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে প্রেরণের সংশোধনী দিয়েছিল। সেই সংশোধনী গৃহীত না হলেও আইনে ধরনের নাম প্রকাশ বা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বিবেচনার জন্য প্রেরণ কোনোভাবেই বারিত করে না। এতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিষয়টি অধিকতর স্বচ্ছ হবে এবং তাতে জনমতেরও প্রতিফলন ঘটবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, পার্টি আইনটিকে অসম্পূর্ণ বলে আখ্যায়িত করলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন প্রণয়নে সংবিধান নির্দেশিত কর্তৃক পরিপূরণ হওয়ায় সরকার ও আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। বস্তুত সংসদের সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ায় আইনটি যে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে তাকে অব্যাহত রাখতে ঐ আইনের নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, জনগণ ও সংসদের সংশ্লিষ্টতা জরুরি বলে বিবেচনা করে। সেই অনুযায়ী পার্টি রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া চিঠিতে এ সম্পর্কিত অভিমত জানাবে। 

এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আইনে বর্ণিত যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন বলে দলটি আশা প্রকাশ করে।

ওয়ার্কার্স পার্টি একইসঙ্গে মনে করে যে, ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকাল শেষ হলেও নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য সংবিধানে কোনো সময় বেধে দেওয়া হয়নি। ফলে রাষ্ট্রপতি তার বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় সময় নিতে পারেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে বিএনপি ও তাদের সমমনাদলগুলো বর্তমানে এ সম্পর্কে কথা বললেও তাদের শাসনামলে নির্বাচনী ব্যবস্থায় এ সংস্কার দূরে থাক, ভুয়া ভোটের তালিকা সংশোধন করতে রাজি হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফল পক্ষ নিতে তারা যেমন বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যবহার করেছে, তেমনি সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কারের দাবিকে অস্বীকার করে বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে নির্বাচনী ফলাফলকে তাদের পক্ষে নিতে পরিস্থিতির তৈরি করে। যার ফলে এ দেশে আবার সেনা শাসনের যথেচ্ছাচার দেখতে হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়। অন্যদিকে কতিপয় বাম দলের নেতিবাচক সমালোচনা করে বলা হয়, এটা ঠিক যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগই যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার যা নির্বাচনে ক্ষমতা, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, অর্থ, অস্ত্র ও ধর্মের ব্যবহারকে বন্ধ করতে পারে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, ড. সুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হক্কানী, হাজী বশিরুল আলম, জ্যোতি শংকর ঝন্টু, অধ্যাপক নজরুল হক নীলু, আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান প্রমুখ। 

এইউএ/ওএফ