বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলব আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। আপনি আলোচনা শুরু করুন।

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের জন্য আইনের প্রয়োগ একরকম, বিরোধীদলের জন্য ভিন্ন রকম। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসছে। এড়িয়ে না গিয়ে এ থেকে পরিত্রাণের পথ বের করুন।

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির জবাবে বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন, তা অসম্পূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি আওয়ামী লীগ কোন কোন সময়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন লবিস্ট নিয়োগ করা বেআইনি কাজ নয়। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে, গুমে ঘটনা ঘটছে, নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে, কিন্তু দেশে বিচার পাচ্ছি না- সেক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আমি দাবি জানাতে পারি। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক এজন্য যদি লবিস্ট নিয়োগ করে, আমি তাকে সমর্থন দেবো।

তিনি আরও বলেন, সরকার ও রাষ্ট্র এক নয়। সরকার অনিয়ম করলে সমালোচনা হবেই। কিছুদিন আগে আলজাজিরা টিভিতে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার ম্যান নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছিল আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সংসদকে এখনো অবহিত করা হয়নি। ওই রিপোর্টটি সত্য না মিথ্যা ছিল, তা আজও জানি না। 
 
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে হারুন বলেন, স্বাস্থ্যে বেহাল দশা। এ মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, কেনাকাটা সব কিছুতেই দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। করোনার সময়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষা বিভাগ অটোপাস আর অটো ভর্তি দিয়ে চলছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। ঘটনার পর গুজব আর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে দায়সারা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলীয়করণ করা হচ্ছে। মেধা তালিকায় থাকলেও ভিন্নমতের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেক কথা আছে। এখানে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে সেখানে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সংসদে কোন কার্যকর বিরোধী দল নেই। তারা কাগজে কলমে বিরোধী দল- এটা তারা নিজেরাই বলেছেন। বর্তমানে নেতৃত্বের গুণাবলী দোষারোপের রাজনীতি আর চাটুকারিতা। সব সময় বিএনপিকে আগুন সন্ত্রাস বলা হয়। ১৯৯৫-৯৬ ও ২০০৫-০৬ সালে অগ্নি সংযোগ ও রেললাইন উৎপাটন আমরা দেখেছি। আন্দোলন সংগ্রামে এটা হয়ই, এসব স্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, এ সংসদে যারা আছে, সব কটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে। বিএনপি করেছে, আওয়ামী লীগ করেছে, জাতীয় পার্টিও এক সময় করেছে। সকলেই আমরা আন্দোলন করেছি। আজ আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির কেন প্রতিবাদ করছেন? কারণ একটি-যদি রাতের আধারে ভোট করে ক্ষমতায় থাকা যায়, যদি বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকা যায়!  

সিইসি কে এম নূরুল হুদার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সিইসি বলছেন তিনি রাতের ভোট দেখেননি। একটি অপদার্থ ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে কী বলব? ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের আনুগত্যশীলদের নিয়ে ইসি গঠন হয়েছে বলেই তাদের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো কথা ইসি বলে না। ভোট হচ্ছে না, চুরি হচ্ছে, তারপরও বলছে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

এইউএ/আরএইচ