ইউপি নির্বাচনে আমি মনোনয়ন বাণিজ্য করিনি : মোছলেম উদ্দিন
চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ফেসবুকে আমার নামে যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আমি মনোনয়ন বাণিজ্য করিনি।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মোছলেম উদ্দিন দাবি করে বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কিছু নিয়ে থাকে তার দায় আমি নেব না। আমি মানুষ, রাজনীতি করতে গিয়ে চলার পথে ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। তবে সম্প্রতি যে অভিযোগ উঠেছে এ ধরনের কোনো অন্যায় কাজ আমি করিনি। তবুও আমার কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীর মনোনয়নের তালিকা তৈরিতে কোন কারচুপি হয়নি জানিয়ে মোসলেম উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এবার নিয়ম মোতাবেক তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় আলোচনা করে একটা তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যারা প্রার্থী হতে চায় তাদের সকলের তালিকা নিয়েছি, বক্তব্য নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাই মেনে নেবেন প্রার্থীরা-এরকম একটা ভিডিও আছে আমাদের কাছে। তিনজনের কথা থাকলেও আমরা পাঁচ থেকে সাতজনের তালিকাও পাঠিয়েছি। আমি একথাগুলো বলার একটাই কারণ, আমাদের একার পক্ষে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার বা সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, ভদ্রলোক (কামাল উদ্দিন) কিসের বশবর্তী হয়ে এই অভিযোগ করেছেন আমি জানি না। তবে সর্বশেষ ফেসবুক লাইভে তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মামলা হয়েছে, তদন্ত হচ্ছে। সুতরাং এটা নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। আমার এখন বক্তব্য হচ্ছে- এ ঘটনার পেছনে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে কি না এটা আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুঁজে বের করার অনুরোধ করছি।
জামাতের সাবেক নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লা চৌধুরীর মনোনয়নের ব্যাপারে মোছলেম উদ্দিন বলেন, মমিনুল হকের ছেলে রুহুল্লাহর নাম আমরা পাঠাইনি। আমরা পাঁচজনের নাম পাঠিয়েছিলাম। তবে কেন্দ্র চাইলে নাম যোগ করতে পারে। জামায়াতের সাথে রুহুল্লার সংশ্লিষ্টতা আছে এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরকে অবহিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কামাল কখনও মনোনয়ন চায় নি। সে আমার এলাকার ছেলে। কামালের সাথে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবিরের কখনও যোগাযোগ ছিল না। তথ্য প্রযুক্তির যুগে অনেক বানোয়াট কিছু তৈরি করা যায়।
এর আগে ৬ জানুয়ারি দুপুর ২টায় নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে চট্টগ্রামের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন অভিযোগ তুলে লিখেছেন— আসন্ন ১৭ নং সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা জনাব আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এম. পির নাম দিয়ে ১৫,০০,০০০৳ (পনের লাখ) টাকার চেক নিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া তো দূরে থাক, কেন্দ্রে আমার নামটি পর্যন্ত পাঠায়নি।
সেই চেক ও টাকা ফেরত চেয়ে আইনজীবী কামাল উদ্দিন লিখেছেন, এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হব এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হব।
এই ঘটনার পর কামালের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভ করে কামাল উদ্দিন ফেসবুকে মোছলেম উদ্দিনের ব্যাপারে স্ট্যাটাসের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাতাহরুল ইসলাম চৌধুরী।
কেএম/আইএসএইচ