আগামী নির্বাচনেও ভোট চুরির ষড়যন্ত্র করছে সরকার
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ভোট চুরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। সব ভোট চোর আজ এক জায়গায় যুক্ত হয়েছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলী সিডিএ আবাসিক মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
আমীর খসরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে নাকি দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আসলে ষড়যন্ত্র মূলত করছে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করছে। আবার এ দেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ একতাবদ্ধ হয়েছে। আন্দোলনের যে জোয়ার শুরু হয়েছে, আগামী দিনে তারা সেই ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যারা যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সভা সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছে, কোনো শক্তি একে রুখতে পারবে না। যারা বাংলাদেশের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে তাদের মূল্য দিতে হবে আগামী দিনে।
আমীর খসরু বলেন, শুনেছি সরকার নাকি বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। একটা পরামর্শ দিই, আপনারা আওয়ামী লীগের যে গুটিকয়েক সমর্থক আছে, তাদের তালিকা করুন। আর বাকি সব বিএনপি। আওয়ামী লীগে এখন কোনো রাজনীতিবিদ নেই। লুটপাটে যারা জড়িত, তারা ছাড়া আওয়ামী লীগে এখন আর কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে আওয়ামী লীগ, মধ্যরাতের ভোট চুরির মাধ্যমে এবং খালেদা জিয়াকে যে কারণে জেলে রাখা হয়েছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে পরিষ্কার হয়েছে যে, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বেগম জিয়াকে জেলে নেওয়া। এই গুম, খুন, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে ক্ষমতায় গেছে এটা বিশ্বব্যাপী দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না, খালেদা জিয়াকে মুক্ত আমরা করব। কার কাছে মুক্তি চাইব? একটা অবৈধ, অনির্বাচিত, দুর্নীতিবাজ, দালাল সরকারের কাছে? খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব আন্দোলনের মাধ্যমে। আবারও বলছি, এই অবৈধ সরকার, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের কাছে আমাদের গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা চাইতে পারি না। আগে তাদের পতন ঘটাতে হবে। পতনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্রের পানিকে বালু দিয়ে রক্ষা করা যায় না, সমুদ্রের পানি বাধ ভেঙে দেয়। আজ দক্ষিণ জেলা বিএনপি বাধ ভেঙে দিয়েছে। যে পরিমাণ লোক সমাগম আজ হয়েছে, এটা একটা স্যাম্পল মাত্র। এটা স্যাম্পল। এখনও তো ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখনি। ফাঁদ দেখাব আগামী দিনে।
তিনি বলেন, ওমিক্রন কোভিডের জন্য নাকি সমাবেশ বন্ধ করতে হবে। ওমিক্রন নয়, আসল রোগ অন্য জায়গায়। রোগ হচ্ছে, সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। ওমিক্রনের নাম দিয়ে ১৫-২০ দিন ঠেকাতে পারবেন, না হলে একমাস ঠেকাতে পারবেন। পতন কিন্তু হবেই হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপির আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে, চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনার সরকারকে এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই সমাবেশের দাবি, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। যদি বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়া হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন আর বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অধিকার চাচ্ছি। কিন্তু সরকার দিচ্ছে না। তাই অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি।
কেএম/এসকেডি