দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধসে পড়েছে দাবি করে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে মনে হচ্ছে অসহায় ও দুর্বল। নির্বাচনের নামে দেশে খুনোখুনি হচ্ছে। কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) বনানী জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাপা চেয়ারম্যান।

জি এম কাদের বলেন, দেশের এক ভাগ মানুষও যদি বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি তা আমলে নিতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল প্রকাশ করবে না। পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে ইসি। আর যদি তাও না পারে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সরে দাঁড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে পরপর চারবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। আবার বিএনপি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে এর ধারাবাহিতা রক্ষা করেছে। আর নির্বাচনে ভোট ডাকাতিতে কারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তা দেশের মানুষ জানে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ কোনোভাবেই অগ্রসর হতে পারবে না।

সংবিধানের মূল চার নীতির শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা আছে উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, তাই মানুষের অধিকার নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা থাকে না। সমাজতন্ত্র আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে ত্যাগ করে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। আর সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র নেই কোথাও। জাতীয়তাবাদ হারিয়ে যাচ্ছে, নিজস্বতা নেই কোথাও। বিজাতীয় সংস্কৃতি আগ্রাসন করছে আমাদের। দেশে শুধু ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে। পল্লীবন্ধু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে সব ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।

বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেই আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন,  স্বাধীনতার মূল চেতনা হচ্ছে শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি কল্যাণময় সমাজ গড়া। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। সমাজের সব স্তরে বৈষম্য। সরকারি দল করলে এক আইন আর সাধারণ মানুষের জন্য অন্য আইন। সরকারি দল না করলে চাকরি ও ব্যবসা করা যায় না। আর শোষণ এখনো বন্ধ হয়নি। দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়নি ৫০ বছরেও। 

দেশের মানুষ এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায় উল্লেখ করে জি এম কাদের আরও বলেন, দেশের মানুষ জানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে না। তাই তারা জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে এক বুক আশা নিয়ে। জাতীয় পার্টির আমলে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দলবাজি, টেন্ডারবাজি ছিল না।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তররে আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা প্রমুখ।

এএইচআর/ওএফ