চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলাসহ ৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও ৪৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির নেতারা। বিএনপির দাবি, মানববন্ধন কর্মসূচির সময় পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার আচরণ ছিল মারমুখী। তারা অনেকটা ইচ্ছা করেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মো. নাছির উদ্দীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেগম রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের নাম উল্লেখ করে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।

বিএনপি নেতারা বলেন, ‘৫ জানুয়ারি ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির ও দলীয়ভাবে প্রতিটি দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বুধবারের এই শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে পুলিশ অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মানববন্ধনে সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করে চলে যাওয়ার অনেক পরে সমাবেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪৯ জনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার আচরণ ছিল মারমুখী। তারা অনেকটা ইচ্ছা করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন বন্ধ করতে সরকার পুলিশকে দিয়ে এই দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের এই ফ্যাসিবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

নেতারা বলেন, ‘বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিএনপিসহ বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সভা সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। সরকারের বর্বরতা, স্বৈরাচারী আচরণ, মামলা-হামলা, লুট, নৈরাজ্য অতীতের সব স্বৈরাচারী শাসকদের হার মানিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা ও কারামুক্তির দাবি এবং গণতন্ত্র হত্যা দিবসের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের  লাঠিচার্জ, মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে তারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও ভয় পায়।’

তারা বলেন, ‘প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান সরকার দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে ভয়াবহ দুঃশাসনের এক জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সরকার নিজেদের কর্তৃত্ববাদী শাসন পাকাপোক্ত করতেই বিরোধী মতের নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর হিংস্র আচরণ অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন বাহিনীকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হীন স্বার্থে অপব্যবহার করে সরকার তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। মানুষের কল্যাণে কাজ না করে ক্ষমতার দাম্ভিকতায় ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে গভীর সঙ্কটে নিপতিত করছে। সারাদেশে বিরোধীদলের ওপর নির্যাতন চালিয়ে দেশকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত  হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ ৭৫ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, পুলিশের কাজে বাধা, পুলিশের সম্পত্তি নষ্ট ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ঘটনার সময় উপস্থিত মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ ৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার পরে আসায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মামলায় আসামি করা হয়নি। বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে চার পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে দলটির ৪৯ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

কেএম/ওএফ