বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি)। প্রেস রিলিজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা ও সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এতে অসন্তোষ আছে অনেক নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাদের দাবি, সম্মেলনের ভয় চেপেছে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মনে। যে কারণে রেওয়াজ ভেঙে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য বর্ধিত সভা ডাকেননি তারা। গঠিত হয়নি কোনো প্রস্তুতি কমিটিও।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে হওয়া কমিটি ৪০ মাস পার করেছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদও পেরিয়েছে ৩১ মাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১১১টি সাংগঠনিক জেলার বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। দায়িত্ব বণ্টনও হয়েছে মেয়াদের শেষ লগ্নে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি দুই মাস অন্তর সাধারণ সভা করার কথা থাকলেও সেটি করা হয় না। এ জন্য সংগঠনে গতি আনতে ৩০তম সম্মেলনের দাবি তুলেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে।

এসবের মধ্যেই মঙ্গলবার ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে তারা বাধ্য হন। এরপর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান ১নং সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিন মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের পূর্ণ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দায়িত্ব পাওয়ার পর শীর্ষ দুই নেতা সংগঠন গোছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ প্রায় সবকটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিও হয়নি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কুষ্টিয়া, নড়াইল, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলার কমিটির আংশিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যে কারণে তারা সম্মেলনের দাবি জানিয়েছেন। এই ভয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে বর্ধিত সভা ডেকে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়নি বলে জানান তারা।

ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাজধানীতে নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের জন্য একটা উৎসবের মতো। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে একটি বর্ধিত সভা করে এই আয়োজনকে সফল করতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের এই রেওয়াজ এবার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে কোনো বর্ধিত সভা হয়নি, প্রস্তুতি কমিটি করা হয়নি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার।

তিনি বলেন, জয়-লেখকের একটাই ভয়, বর্ধিত সভা ডাকলে সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সম্মেলনের আওয়াজ তুলতে পারেন। দুই বছর মেয়াদ হলেও ছাত্রলীগের এই কমিটি সাড়ে তিন বছর ধরে আছে। এটা নিয়ে অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসাহাসি করে, যেটা আমাদের বিব্রত করে। এজন্য সবাই সংগঠনকে গতিশীল করতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব চায়। এটাকেই জয়-লেখক ভয় পান। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিও বারবার পেছানো হচ্ছে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিং করার বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালনে দু-একটা প্রস্তুতি সভা হলেও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

এ বিষয়ে আরেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সোহান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগের দুই বছরের কেন্দ্রীয় কমিটি চার বছরে গিয়ে ঠেকছে, প্রেস রিলিজে কমিটি দিচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো নিয়ে কথা উঠবে এবং ৩০তম সম্মেলনের দাবি উঠবে তাই তারা সাধারণ সভা ডাকে না। সম্মেলন নিয়ে যাতে কথা না উঠে। তারা দুজন (জয়-লেখক) ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাদের দিয়ে ছাত্রলীগের কোনো উপকার হবে না। নতুন সম্মেলন ডাকা বাধ্যতামূলক, এটা অনিবার্য হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গত এক সপ্তাহে কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও জয়-লেখকের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও ফোন করে তাদের পান না বলে জানিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-

৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।

সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

সকাল ৯টায় কার্জন হলে কেক কাটা।

দুপুর ২টায় ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন ও আনন্দ শুভাযাত্রা।

৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভা।

এইচআর/এসকেডি