আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শূন্য থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন বিশ্বের বুকে ‘রোল মডেল’। এমনকি ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং অপপ্রচার করছে। আমাদের এ অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা, দূতাবাসকে তৎপর হতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য ফরেন সার্ভিসকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাজনীতির ভিতর বাহির ও ষড়যন্ত্রের নিষেধাজ্ঞা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে যৌথভাবে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ টিভি।

গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলছি না, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছি। যারা মানবাধিকারের সবক দিচ্ছে সেসব দেশ নিয়ে বিশ্বে প্রচুর লেখালেখি আছে। সারা পৃথিবীতে কিছুদিন আগে একটি স্লোগান ছড়িয়েছে ‘ব্ল্যাক লাইভস মেটার’। এ একটি স্লোগানেই বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তারা সিরিয়া, ইরান, ইরাকেও গণহত্যা করেছে। আমরা সেসব নিয়েও বলতে চাই না। আমরা জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরির নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়তে চাই। ‘৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর দেশ উল্টো ধারায় চলেছিল।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমরা যে আদর্শ বুকে ধারণ করে ৯ মাস যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, সেই চার নীতির অন্যতম ছিল সমাজতন্ত্র। সংঘাত সেখান থেকেই শুরু। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। পশ্চিমা পুঁজিবাদী নীতির সঙ্গে মেলেনি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় আসল তারা আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করল। অনেকের দণ্ড কার্যকর হয়েছে, অনেকে বিদেশে পালিয়ে আছে। যে দেশ মানবাধিকারের উপদেশ, নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা তাদেরই আশ্রয়ে আছে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে কী-নোট উপস্থাপন করেন আইনজীবী ও গবেষক ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ।

উপস্থাপনায় ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শূন্য থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন বিশ্বের বুকে ‘রোল মডেল’। এমনকি ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং অপপ্রচার করছে।

এ আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যেসব দেশি ও বিদেশি অপশক্তি মেনে নিতে পারেনি, সেই অপশক্তি এ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আমাদের অর্জনকে আঘাত করার চেষ্টা করছে। সব ষড়যন্ত্র কঠিন হাতে দমন করা দেশের স্বার্থে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিংবা দেশের ক্ষতিতে উল্লসিত, তাদের সামাজিকভাবে প্রতিহত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রকে মানবাধিকার রক্ষা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতে মিত্র, অংশীদার ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে এ বিজয়ের মাসে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের শক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার আদর্শ। এ শক্তি ও আদর্শ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যাব। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর এ বাণী আমাদের এগিয়ে চলার পথে অনুপ্রেরণা ও শক্তি জোগাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আজকের বিশ্ব স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। হত্যা, সামরিক ক্যু, সে সব দেশের সরকারকে উৎখাত করা থেকে শুরু করে তৃতীয় দেশের বহু রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার পেছনের কারিগর ছিল মার্কিন প্রশাসন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, রাজনীতির ভেতরের রাজনীতি আমরা ভালোই বুঝি। আমাদের বিরোধীশক্তিরা বিদেশি প্রভুদের ডেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের আন্দোলন করার কোনো শক্তি নেই। শুধু ঘরে বসে বিদেশি প্রভুদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করাই তাদের কাজ।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো সবাই সমান। একে অপরকে ছোট করে দেখার কিছু নাই। তবে কোনো দেশ যদি অন্য কোনো দেশকে ছোট করে দেখে তাহলে এটা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়। এছাড়া অন্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও কারও হস্তক্ষেপ করা আইন লঙ্ঘন।

প্রজন্ম ‘৭১-এর সভাপতি আসিফ মুনির তন্ময় বলেন, আমাদের ডিপ্লোম্যাসি আরও স্ট্রং করা দরকার। তাহলে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা সহজ হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারকে প্রচারবিমুখ হলে চলবে না, সরকারের ভালো উদ্যোগগুলো প্রচার করতে হবে। তাহলে আমরা সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, আমরা যখন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাই তখন দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। আমরা তা রুখে দিয়েছিলাম। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নতুন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের দেশের জন্ম যুদ্ধ করে। এ দেশের বড় শক্তির নাম বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও তারুণ্য। যেকোনো ধরনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আমরা অতীতের মতোই রুখে দেব।

জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— গৌরব৭১-এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল রূপম, এফ এম সোহাগ, নাজমুল হক সিদ্দিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতারাসহ গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা।

এসএসএইচ