১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী সৃষ্ট অবস্থার সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের চিত্রের খুব বেশি পার্থক্য নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেন, ৭১ সালে হানাদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল। সেই সময়ের চিত্রের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির খুব একটা পার্থক্য নেই। এই সরকার যেভাবে জনগণের ওপর নির্যাতন-অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাচ্ছে তা কোনো অংশেই হানাদার বাহিনীর চেয়ে কম নয়।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস (১৪ ডিসেম্বর) উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের (বাহিনীর) ৭ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কারণটা কী? খুব পরিষ্কার করে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, এরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে-বেআইনিভাবে খুন করেছে, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, বিনা বিচারে হত্যা করেছে। এখানে ছয়শর বেশি মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা না হলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন শুধুমাত্র দেশের স্বাধীনতার জন্যে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্যে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যদি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি তবেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আসুন শপথ গ্রহণ করি, আমরা ঐক্যের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাই। 

তিনি বলেন, আজ তরুণদের হত্যা করা হয়েছে শুধু গণতন্ত্রের (পক্ষে) কথা বলার জন্য। প্রায় দেড়শ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে ‍শুধু সত্য বলার জন্যে। সাড়ে ৪ হাজার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেক অধ্যাপককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখছি, আমাদের অনেক ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরে যখন স্বাধীনতাকে সুসংহত করার কথা, আমাদের সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার কথা, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও উপরে নিয়ে যাওয়ার কথা, তখন একটি বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। যাদের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, আজ তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় দেশে মুক্তিযুদ্ধ, সেই গণতন্ত্র আজ অনুপস্থিত। 

দেশে আইনের শাসন নেই দাবি করে মোশাররফ বলেন, বিচারব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আমরা দেখলাম, আমেরিকায় গণতন্ত্র সম্মেলন হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। আর সরকার কী বলল? যারা এই সম্মেলন করছে তাদের গণতন্ত্র হলো নরম গণতন্ত্র। আর বাংলাদেশে নাকি খুব শক্তিশালী গণতন্ত্র আছে। গত ৫০ বছর বাংলাদেশে যা ঘটছে, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব কিছুরই ভুল ব্যাখ্যা দিতে এই সরকার সর্বদা সচেষ্ট।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।

এএইচআর/এইচকে/জেএস