বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া হচ্ছেন সেই নেতা, ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে যার ভূমিকা একজন মুক্তিযোদ্ধার। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। আর আমাদের (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি শিশু মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও তখন মায়ের সঙ্গে কারাগারে ছিলেন।’

আজ শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

দেখতে চাই সরকার কী ব্যবস্থা নেয় 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খবরে বেরিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেনজির আহমেদ (পুলিশ মহাপরিদর্শক-আইজিপি) ও র‍্যাবপ্রধানের ওপর। আমি এটাকে চমক মনে করি না। আমি একে মনে করি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। কারণ, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেয়, জনগণকে হত্যা করে তাদের এভাবে পরিণতি ভোগ করতে হয়। আমরা এতদিন ধরে বলে আসছি মানবাধিকার হরণ হচ্ছে, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে, পুলিশকে ব্যবহার করে মানুষকে হত্যা করছে- সেটা প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল আমেরিকায় যে সম্মেলন হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশকে ডাকা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে (সরকার) কী ব্যবস্থা নেয়। একজন বলেছে সরকার তাদেরকে কাজে লাগিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মনে রাখা উচিত তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা কোনো ব্যক্তি বা দলের কর্মকর্তা নন।’

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘সংবিধানে আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া আছে তার বাইরে গিয়ে কোনো দায়িত্ব পালন আপনাদের কাজ নয়। (তাহলে) একদিন না একদিন তার পরিণতে ভোগ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কী লজ্জা! আমাদের পুলিশপ্রধান ও র‍্যাবপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। কী কারণে? তোমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছ। তোমরা বেআইনিভাবে মানুষকে হত্যা করেছ। খুন করতে সাহায্য করেছ। সুতরাং, এর জবাব তোমাদেরকে দিতেই হবে।’

‘আজ আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অপরাধ হচ্ছে, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের সংবিধানকে পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সূক্ষ্মভাবে কাজ করছে’ বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।  

তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছিল, সেদিন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন- আজ থেকে দেশে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেটা ব্যাহত হবে। হয়েছেও সেটা। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এখানে যে সংসদ আছে, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা কোনো নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। আজ যে সরকার আছে, তাদের জবাবদিহিতা নেই। এই যে ব্যবস্থা তা কখনও একটা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘চারদিকে তাকিয়ে দেখবেন মানুষের মধ্যে বিভাজন, অস্বস্তি। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, মন্ত্রীরা আছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। যে যা খুশি করছে, যেমন খুশি লুটপাট করছে। এই অবস্থা তৈরি হয়েছে, তার একমাত্র কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর যখন খালেদা জিয়ার হাতে দায়িত্ব এসেছে, যখন গণতন্ত্র আবার হরণ হয়ে গেল, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো, তখন তিনি (খালেদা) জিয়াউর রহমানের (হাতে থাকা) পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যে পতাকা স্বাধীনতার, সার্বভৌমত্বের ও গণতন্ত্রের। দীর্ঘ নয় বছর রাজপথে লড়াই করেছেন, খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেন নাই। কারও দয়ায় আসেন নাই। তিনি রাজপথে লড়াই করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় বসেন।’ 

খালেদা জিয়াকে কারাগারে চিকিৎসা না দেওয়ার কারণে আজ তিনি অত্যন্ত গুরুতর রোগে ভুগছেন দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই নেত্রীর সব মানবাধিকার হরণ করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, চিকিৎসা না দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কারণ একটাই- তাকে যদি মাইনাস করে দেওয়া যায়, রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়, তাদের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক হবে। তাদের ধারণা ভুল। এই দেশের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে, কারণ এই দল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা বলে।’ 

এএইচআর/এইচকে