আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে গদিচ্যুত করার হুমকি বিএনপির
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে গদিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে গদিচ্যুত করা হবে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, এটি আমাদের জীবন-মরণের প্রশ্ন, অধিকারের প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅনশন কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তার চিকিৎসার দাবিতে পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এ দেশের মাটির সঙ্গে মিশে আছেন। মা-মাটি বলতে আমরা খালেদা জিয়াকে বুঝি। তাকে মুক্ত করতেই হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন সবাই হাত তুলে শপথ করি, খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত, বিদেশে তার চিকিৎসার দাবি আদায় না করা পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরে যাব না।
আগামী ২২ নভেম্বর একই দাবিতে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সরকার দাবি না মানলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২২ তারিখের সমাবেশের পরও সরকার দাবি না মানলে আরও কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।
অনশন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রমাণ করে প্রতিহিংসার কারণে আজ তিনি কারাবন্দি।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠাতে আইনি কোনো বাধা নেই- উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার চাইলে তাকে বিদেশে পাঠাতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার কারণে আজকে খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
অনশনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভাববেন না এখানে আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সফল হব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের চলার গতি থামবে না।
শনিবারের কর্মসূচিতে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম থাকায় দলের সিনিয়র নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। টাঙ্গাইল জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, পাবনা জেলার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খানসহ আরও কয়েকটি জেলার শীর্ষ নেতারা জেলার কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সমালোচনা করেন সিনিয়র নেতারা।
সকাল নয়টা থেকে শুরু হওয়া গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজধানী ও আশপাশের এলাকার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুরুতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফুটপাতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সীমাবদ্ধ ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে পরে নেতাকর্মীদের ভিড় মূল সড়কে চলে আসে।
অনশনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের মূল সড়কে কার্পেট বিছিয়ে বসতে দেখা যায়। নয়াপল্টনে স্কাউট মার্কেট থেকে জোনাকি সিনেমা হলের বিপরীত সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো অনশনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের উপস্থিতি।
মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে অনশন করায় সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পল্টন-ফকিরাপুল এলাকায় কিছুটা যানজট ছিল। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশসহ সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আব্দুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ।
এএইচআর/আরএইচ