জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা, বিদেশে চিকিৎসা চেয়ে শনিবার গণঅনশন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।
বিজ্ঞাপন
এ সময় মির্জা ফখরুল জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সুচিকিৎসা ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ২০ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে গণ-অনশন কর্মসূচি পালিত হবে। ঢাকায় কর্মসূচি পালনে উপযুক্ত জায়গা না পাওয়া গেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ। সরকার তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিলেও তিনি স্বাধীন জীবনে ফিরতে পারেননি। শর্ত থাকায় তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকে তার শারীরিক জটিলতা বেড়েছে। বিদেশে তার চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
চিকিৎসকদের বরাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া ৫৩ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখন তাকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে, যা তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
বিএনপির এ নেতা বলেন, গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া নতুন উপসর্গ নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার একটি বায়োপসি করা হয়। কিছুদিন বাসায় থাকার পর ১৩ নভেম্বর আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবার রক্তদানের পাশাপাশি তার এন্ডোস্কপিও করা হয়েছে।
দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে চিকিৎসা করে খালেদা জিয়াকে সুস্থ করা সম্ভব নয় বলে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার জানিয়েছে। তারা তাকে বিদেশে উন্নত কোনো মেডিকেল সেন্টারে দ্রুত স্থানান্তরের কথা জানিয়েছে। মেডিকেল বোর্ড স্পষ্টভাবে বলেছে যে, খালেদা জিয়া এমন একটি অবস্থায় আছেন, তা এখন সমাধানযোগ্য। কিন্তু সময়োপযোগী চিকিৎসা দেওয়া না হলে তিনি যেকোনো মুহূর্তে ভিন্ন অবস্থায় যেতে পারেন। তখন আর কোনো চিকিৎসা কার্যকরের সুযোগ থাকবে না।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া অমানবিক দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার যেকোনো দণ্ডিত ব্যক্তিকে শর্তযুক্ত করে বা শর্ত ছাড়া মুক্তি দিতে পারে। সরকার খালেদা জিয়াকে শর্তযুক্ত করে মুক্তি দিয়েছে। এরপরই বলা আছে, সরকার চাইলে যেকোনো শর্ত যুক্ত করতে পারে। অর্থাৎ এটি সম্পুর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার।
তিনি বলেন, বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতির বিষয়টি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান প্রমুখ।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর প্রথমে পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগার ও পরে কারাবন্দি অবস্থায় বিএসএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর আরও তিন দফায় তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
এএইচআর/আরএইচ/জেএস