বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

সন্ধ্যা ৭টা, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটের পৌরভবন চত্বর, জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু ও রূপালি চত্বর সবখানেই খণ্ড খণ্ড মানুষের জটলা। সব জটলাতেই আলোচনার মুখ্য বিষয় নোয়াখালীর বর্তমান রাজনীতি। চলছে দ্বিধাহীন রাজনৈতিক আলাপ। তবে যাকে নিয়ে এত আলোচনা তিনি ক্ষমতাসীন আওয়াম লীগ কিংবা অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির কোনো বড় মাপের নেতা নন। তিনি নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায় টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত মেয়র, আবদুল কাদের মির্জা।

আরেকটি পরিচয়ও রয়েছে, বসুরহাট পৌরসভার এ মেয়রের। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই। তবে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে দলীয় নেতাদের অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আলোচনায় আসেন কাদের মির্জা।

সোম ও মঙ্গলবার (২৫ ও ২৬ জানুয়ারি) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দল-মত নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষের মুখে মুখে আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যের উদ্ধৃতি ও প্রশংসা। সঙ্গে পরবর্তী নতুন বক্তব্য কী হবে তার জন্য অধীর আগ্রহ!

সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আশপাশ এলাকা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্য শুনতে ছুটে আসছেন।

বসুরহাটের রূপালি চত্বরে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নেতা সত্য কয়, শুনতে ভালো লাগে। লোকজন কথা শুনতে অনেক দূর থেকেও আসেন।’

শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন বলেন, ‘মির্জা সাহেব খুব ভালো বক্তৃতা দেন। তবে আগে তার দলের নেতারা ছাড়া তার বক্তব্যের প্রতি অন্যদের আগ্রহ ছিল না। এখন সব দলের লোকজনই তার বক্তব্য শোনেন।’ একের পর এক ‘অপরাজনীতি’ বিশেষ করে কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন আবদুল কাদের মির্জা। নিজের বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকেও ছেড়ে কথা বলছেন না তিনি।

এতে করে তার বক্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। তাকে নিয়ে তথা নোয়াখালীর রাজনীতি নিয়ে জাতীয় অঙ্গনেও আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া আগামী কয়েকদিনে এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে সেদিকেই নজর মানুষের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ঢাকা পোস্ট-এর সঙ্গে কথা হয় বর্তমান সময়ে আলোচিত আবদুল কাদের মির্জার। তিনি জানান, অপরাজনীতি নিয়ে অব্যাহতভাবে কথা বলে যাবেন। এ পথে দল বহিষ্কার কিংবা চূড়ান্ত পর্যায় তথা মৃত্যু হলেও তিনি সত্য বলে যাবেন।

আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্য শুনতে মানুষের ভিড়/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

তিনি জীবনের সেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বলেও জানান ঢাকা পোস্ট-কে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জানান, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার আর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বসুরহাটের পৌর নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নানা অভিযোগ তুলে আলোচনার জন্ম দেন আবদুল কাদের মির্জা। তবে গত ১৬ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কাদের মির্জা।

নৌকা প্রতীকে কাদের মির্জা পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৮ ভোট। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা মোশারফ হোসেন মোবাইল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন এক হাজার ৪৫১ ভোট।

জীবনের সেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কাদের মির্জা

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপিকে নিয়ে দৃশ্যমান কোনো আলোচনা না হলেও রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন আবদুল কাদের মির্জা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা তার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানান ঢাকা পোস্ট-কে।

প্রায় মাস খানেকের চেয়ে একটু কম সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক অসঙ্গতি, অপরাজনীতি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অব্যাহতভাবে কথা বলছেন এই নেতা। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার দেওয়া, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়, ওয়েবিনারে যুক্ত হওয়াসহ তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে পরিবারে সময় দিতে পারছেন না।

সময়ের অভাব আর ব্যস্ততার কারণে অনেক গণমাধ্যম কর্মীকে আপাতত নাও করতে হচ্ছে বলেন জানান তার ব্যক্তিগত সহকারী।

এনআই/এফআর