আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার পাশাপাশি সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। এসব ঘটনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা।
ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৃণমূল নেতাদের সামলাতে জেলার নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও কাজ করছেন। তারপরও তৃণমূলে বিরোধ বাড়ছেই।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০০টি সংঘাতের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য। সেপ্টেম্বরের ৩০ দিন এবং অক্টোবরের প্রথম চারদিনে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও নানা অভিযোগ উঠছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৬৭টি। এতে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৯৪২ জন। স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনগুলো ধরলে এ সংখ্যা আরও বেশি।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯০০।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা মেম্বার হওয়ার যোগ্য নন তারাও চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান। দলীয় প্রতীক দেওয়ার কারণেই এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। মার্কা দেওয়ার আগে এটা ছিল না।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আঞ্চলিক ও গোষ্ঠীগত নানা ফ্যাক্টর কাজ করে। ধরেন, আমি চেয়ারম্যান আছি, আমি নৌকাটা পেলাম না কিন্তু আওয়ামী লীগ করি। আরেকজন নিয়ে গেল নৌকা। তখন আমি কিন্তু আমার প্রভাব-প্রতিপত্তি রক্ষা করার চেষ্টা করব। এমন অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে নৌকা প্রতীক দেওয়ার কারণে।
তৃণমূল আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনটা একেবারেই তৃণমূলের বিষয়। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি হলে তা এক সময় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সময় এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়াই ভালো।
তিনি বলেন, আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২/৩ জনের বেশি প্রার্থী পাওয়া যেত না। এখন ১০/১৫ জন প্রার্থী হচ্ছেন। কারণ, প্রতীক পেলে তো জয় নিশ্চিত। অনেক সময় সঠিক প্রার্থীও নির্বাচন করা যায় না। উপজেলা কমিটি প্রার্থী নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেয় জেলায়, জেলা পাঠিয়ে দেয় সেন্ট্রালে। সেন্ট্রাল (কেন্দ্র) ইউনিয়নের প্রার্থী কীভাবে চিনবে? অনেকে আবার তদবির করে টাকার বিনিময়ে সেন্ট্রাল থেকে প্রতীক নিয়ে আসেন। দেখা যায় তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। এ কারণে জটিলতা আরও বাড়ে। আমার মনে হয়, দলীয় প্রতীক ছাড়া তৃণমূলের এ নির্বাচন হওয়া উচিত।
এইউএ/এইচকে