সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ১৪ দলের
কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম শ্রেণি-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। রোববার ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ আহ্বান জানান জোট নেতারা।
সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে যারা দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, সেই অপশক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, তারা কেন কুমিল্লাকে বেছে নিল? কেন তারা নোয়াখালীকে বেছে নিল? আজ তা খুঁজে বের করতে হবে। আমি মনে করি, এ কাজ উগ্রবাদী গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত, এতে ইন্ধন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত চক্র। রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমেই এদের মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। তাই আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সহায়ক শক্তিগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই এ উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মোকাবিলা করব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, এসব ঘটনা আমরা পাকিস্তান আমল থেকে দেখে আসছি। সেই ৬০-এর দশক থেকে এসব হয়ে আসছে। ইসলাম গেল গেল বলে তখন থেকে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে এ অপশক্তি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলাম স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তা সম্ভব হয়েছে। আমি চাই, ১৪ দল ইস্পাত কঠিন হয়ে সব মোকাবিলা করবে এবং তার পথ দেখাবেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সত্যিকার অর্থে ধর্মবিশ্বাসী কোনো মানুষ এসব হামলা করতে পারে না। সারাদেশের অনেক মন্দিরে হামলা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে। মানুষ নিহত হয়েছে। আমরা ভিডিওতে দেখেছি- কীভাবে তারা এ নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে!
তিনি বলেন, রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লা সব ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। সাম্প্রদায়িকতা এত বেশি বিস্তার লাভ করছে যে, তা সব দলেই আছে। এদের সম্পর্কে দলমত নির্বিশেষে নির্মোহ বিশ্লেষণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন করা এবং সমস্ত পাঠ্যক্রমে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, কুমিল্লার হামলার পেছনে কারা ছিল? ৭১-এর পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াতিরাই। তারা দাঙ্গার জন্য উস্কে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। সুতরাং এ হামলাকে আমি জঙ্গি হামলা হিসেবেই দেখব। এটি পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক হামলা। সরকারকে বিপদে ফেলতেই এ হামলা করা হয়েছে। সরকারকে উৎখাত করতে এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই এ হামলা।
সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থনীতিতে ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তা সহ্য করতে পারছে না। তারা ধর্মের নামে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কুমিল্লার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাজনৈতিক মদদপুষ্ট। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এ অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।
এ সময় তিনি কেন্দ্রীয় ১৪ দলকে বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সভা ও প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেন।
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, বাঙালি জাতিসত্তাকে একসঙ্গে করে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন উগ্রবাদীদের সহ্য হচ্ছে না। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কুমিল্লার ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আর উগ্রবাদ সব একই সূত্রে গাঁথা। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেষ্ট থাকতে হবে। ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে এমন আরও আঘাত আসতে পারে, যা শক্তভাবে প্রতিহত করতে হবে। ধর্মের নামে যা হচ্ছে, ইসলাম তা সমর্থন করে না।
জাতীয় পার্টির-জেপি প্রেসিডিয়াম মেম্বার এজাজ আহমেদ মুক্তা বলেন, ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা থেমে নেই। তারা সারাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে। এরা দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায়। দেশের দুর্দিনে আমরা কখনো চুপ করে ছিলাম না, থাকব না।
গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি-জামায়াত। এদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এইউএ/আরএইচ