দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন নির্দেশকে ‘ম্যাচিউর’ (পরিপক্ক) মনে করছেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তবে অন্যরা বলছেন, এ সরকারের অধীনে দুই দফা নির্বাচনে ‘তামাশা’ হয়েছে। এখন তৃতীয় দফা তামাশার প্রস্তুতি চলছে।

ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা বলছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি সব দলেরই থাকা উচিত। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘ম্যাচিউর’ নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন নির্দেশকে ‘ম্যাচিউর’ (পরিপক্ক) মনে করছেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তবে অন্যরা বলছেন, এ সরকারের অধীনে দুই দফা নির্বাচনে ‘তামাশা’ হয়েছে। এখন তৃতীয় দফা তামাশার প্রস্তুতি চলছে

ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর নেতারা বলছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যে দল ২৪ ঘণ্টায় নির্বাচন করতে পারে তাদের আবার প্রস্তুতি নিতে হয়! সচিবদের বলে দেবে আর নির্বাচন হয়ে যাবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পক্ষে আমাদের যে সংগ্রাম সেটা চলবে।’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নির্বাচনী প্রস্তুতি নেব না কেন? সবাই নেবে, আমরাও নেব। আমাদের প্রস্তুতি চলছে।’

দেশে কি প্রকৃত নির্বাচনের অস্তিত্ব আছে— এমন প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দেশে তো প্রকৃত নির্বাচনের কোনো অস্তিত্বই নাই। এখন প্রস্তুতির নামে প্রহসন চলছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত সব স্তরের নির্বাচনী ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে দলীয়করণে রূপান্তরিত। ভোটটা একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।’

গত ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন / ফাইল ছবি

‘এখন নির্বাচনের প্রস্তুতির চেয়েও নির্বাচন ব্যবস্থাকে কী করে আবার সঠিক জায়গায় আনা যায় এবং এটাকে জবাবদিহিমূলক করা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপূরক কীভাবে হবে, সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন হলেই সুষ্ঠু গণতন্ত্র হয় না। তারপরও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন একটা অনুষঙ্গ। সেই জায়গায় এসে গণতান্ত্রিক যে প্রতিষ্ঠান সেগুলো যদি গণতান্ত্রিক না হয় তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, সুষ্ঠু গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করে না।

এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বহু ধরনের সংস্কার দরকার। আমাদের গোটা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটাকে আবার পুনর্গঠন, পুনর্নির্মাণ করতে গেলে সব রাজনৈতিক দল, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা দরকার। তাদের মতামত দরকার। জাতীয়ভাবে একটা মতামত আসা প্রয়োজন। তাই এখন ভোটের জন্য প্রস্তুতি নয়, মূল সমস্যা ভোট-ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার করা। সেটা কার্যকরের জন্য আলোচনা হওয়া দরকার।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রাশেদ খান মেনন ও খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়টি ‘অস্বাভাবিক’ নয় উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষমতাসীন দল বলতেই পারে নির্বাচনের কথা। কিছু কলহ রয়েছে, সেগুলো মিটমাটের জন্য তারা এটা বলতে পারে। এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে, একাদশ জাতীয় সংসদের মতো নির্বাচন করলে ভুল হবে। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে কোনো আগ্রহ নেই। এমন নির্বাচনের পাঁয়তারা জনগণ আর মেনে নেবে না।

১৪ দলীয় জোটের নেতা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির যে ঘোষণা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দিয়েছেন, এটি ম্যাচিউর সিদ্ধান্ত। তাদের নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ আছে। ঘোষণাপত্র আছে, ইশতেহার আছে। এগুলোর জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। সব দলের-ই উচিত এখন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা।

বিষয়টি তামাশার— উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তামাশার প্রস্তুতি তো সবসময় নেওয়া যায়। এ সরকারের অধীনে দুই দফা তামাশার নির্বাচন হয়েছে। এখন তৃতীয় দফার প্রস্তুতি চলছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম- কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন। সভাশেষে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সভায় সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়ন করতে হবে। ইশতেহারে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় দলটি। জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮টি। অপরদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট সবমিলিয়ে মাত্র সাতটি আসন লাভ করে।

শরীফ নুরুল আম্বিয়া, হাসানুল হক ইনু ও জোনায়েদ সাকি

প্রার্থীদের সমান সুযোগ-সুবিধা না দেওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ বলে আসছে বিরোধীপক্ষ। ওই নির্বাচন প্রসঙ্গে সেসময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের নির্বাচন ইতিবাচক নয়। এটাও ঠিক যে একটা নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র আসে না আবার ধ্বংসও হয় না।

সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

এইউএ/এমএআর/এমএইচএস