‘শেখ হাসিনার সঙ্গে তুলনীয় নেতা এখন বিশ্বে নেই’
শত প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে এবং জীবনের মায়া ত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য নিজেকে যেভাবে উৎসর্গ করেছেন এবং পররাষ্ট্রে তার যে সফলতা তাতে সমসাময়িক বর্তমান বিশ্বে তার সঙ্গে তুলনীয় নেতা আর নেই। শুধু এশিয়া নয়, সারা পৃথিবীর এক প্রধান নেতার স্থান অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এক বিশেষ ওয়েবিনারে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি।
বিজ্ঞাপন
এতে অংশ নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, শত প্রতিকূল পরিস্থিতি হত্যাচেষ্টা-এসব পার হয়ে দলকে সংহত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) এশিয়া কেন, সারা পৃথিবীর এক প্রধান নেতার স্থান অর্জন করেছেন। তার মধ্যে আমি যে আত্মবিশ্বাস দেখি নিজের দেশ এবং পররাষ্ট্রে তার যে সাফল্য তাতে তার সঙ্গে তুলনা করা যায় এমন অন্য কোনো নেতা আমাদের সামনে নেই।
তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাওয়া দেখতে হলে দেখতে হবে দেশের সাক্ষরতার হার বেড়েছে কি না, দেশের অর্থনীতি বেড়েছে কি না, বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়েছে কি না, লোকের জীবনের উন্নয়ন হয়েছে কি না। এ বিষয়টি গর্বের যে বাংলা ভাষা পৃথিবীর মাতৃভাষার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এজন্য শেখ হাসিনা তড়িৎ যে উদ্যোগটা নিয়েছিলেন এটা সামান্য তৃপ্তি নয়, অসাধারণ।
শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মন্তব্য করে পবিত্র সরকার বলেন, বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু করাসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া, এটা সাধারণ নেতার কাজ নয়। যেখানে আমেরিকা হাঁচি দিলে আমাদের কাশি দিতে হয়, সেখানে শেখ হাসিনা পৃথিবীর মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদাবোধ এবং সেই সঙ্গে দেশপ্রেমের। দেশের মর্যাদা এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে যে বাংলাদেশকে পুরো পৃথিবী সম্মান করে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, যে বাংলাদেশকে আমরা পঁচাত্তরের পর হারিয়ে ফেলেছিলাম সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ তিনি (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, উন্নয়নের যাত্রায় যুক্ত করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। সন্তান-পরিবারকে তিনি সেভাবে সময় দিতে পারেননি। সবসময় তিনি দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, নেত্রীর দেশের প্রতি, মাটি ও মানুষের প্রতি তার যে টান, গভীরতা, একই সঙ্গে অসাধারণ একজন কর্মী বান্ধব নেতা তিনি। অসাধারণ মানবিক মানুষ শেখ হাসিনা। দেশের এমন কোনো ক্ষেত্রে নেই যে তিনি উন্নয়ন করেননি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে তার কন্যার নেতৃত্বেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে নিয়ে যাচ্ছে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ বলেন, আমাদের বড় দায়িত্ব হচ্ছে শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করে ধরে রাখা। এজন্য আমাদের যোগ্য এবং সৎ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। নতুন প্রজন্মকে শেখ হাসিনাকে এগিয়ে নিতে নিজেদের যোগ্য করে, মানবিক গুণাবলি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু গুণাবলী ধারণ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশের যে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল, যারা ২১ বছর এক প্রকার শাসন করেছে; সেটিকে জিরো টলারেন্স প্রধানমন্ত্রীর একটি কার্যকরী পদক্ষেপ, সেটি সারাবিশ্বে প্রশংসা পাচ্ছে। একই সঙ্গে একটি অসাম্প্রদায়িক চিন্তা সেটি কিন্তু বড় বিষয়। তার গণতান্ত্রিক ভাবনার সঙ্গে দারিদ্র বিমোচন এবং তাদের যে অবস্থার পরিবর্তন সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তার যে অবদান এবং লড়াই সেটি নিঃসন্দেহ প্রশংসনীয়। জীবনের পরোয়া না করে তিনি যেভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন, সেভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। আজ যে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি, তার পেছনে শেখ হাসিনার অবদান।
এশিয়ান এজে’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নাদীম কাদির বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তিনি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। উনার কাছে অনেক ফোনই এসেছিল কিন্তু তিনি সেগুলো রিজেক্ট করেছেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেই তিনি তা পেরেছেন।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর থেকে তাকে লড়াই করতে হয়েছে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। দেশে ফিরে এসে টিকে থাকার সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে। ১৯৯১ সালে পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শুধু নির্বাচন ও দলকে নেতৃত্ব দিলেই হবে না, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেতে হবে। শেখ হাসিনা প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি পুরো ৫ বছর মেয়াদ পূরণ করে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছন। এর আগে-পরে কখনও শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি কেউ। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শেখ হাসিনার পদযাত্রা কখনও শেষ হবে না, কারণ তিনি যতদিন থাকবেন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শেখ হাসিনা না আসলে নারীর ক্ষমতা এখনকার মতো হতো না। আগে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত দৃশ্যমান ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। সব জায়গায় এখন নারীরা কাজ করছেন। আজ চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর সাবলীল উপস্থিতি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে ভোটাধিকার দিয়েছেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক বলেন, শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের বর্তমানের নয়, তিনি দেশের ভবিষ্যতের। তার হাতেই দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ। তার বিকল্প কেউ নাই, তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।
ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
এইউএ/এসএসএইচ