বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিন

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। 

বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিন বুধবার দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটির হাইকমান্ড। 

এ বৈঠকে অংশ নিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা দলের সিনিয়র নেতাদের আগামী দিনের দলের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণে এ দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ভার্চুয়ালি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ছয় ঘণ্টার এ বৈঠকে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের বিএনপি নির্বাহী কমিটির ৮৫ জন সদস্য অংশ নেন। এর মধ্যে ৬৩ জন বক্তব্য রাখেন। 

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, প্রত্যেক সদস্যই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সবার যুক্তি ছিল, এভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মানে নিশ্চিত পরাজয়। তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো ভোটের ফল আগের রাতেই নিয়ে নেবে। তাই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলনে নামতে হবে। এর জন্য যুগপৎ আন্দোলন করতে গিয়ে যদি জোটের পরিধি বাড়ানোর দরকার হয়, তাহলে তাই করতে হবে। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। আন্দোলনের পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য কূটনৈতিক সমর্থনও আদায় করতে হবে বিএনপিকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে অংশ নেওয়া চট্টগ্রামের এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈঠকে সবাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া পক্ষে মত দিয়েছেন। একইসঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে যদি জোটের পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তবে তা-ই করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে দলের সিনিয়র নেতাদের করণীয় ঠিক করার তাগিদ দিয়েছেন নেতারা।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগের বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈঠকে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তি, আন্দোলন, সংগঠন গোছানো, কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর বিষয়ে মতামত এসেছে।

বৈঠকে উপস্থিত তিন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, নেতাদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার পক্ষে, আরেকটি অংশ সম্পর্ক রাখার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে। অনেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করে তা সংস্কারের পক্ষেও মতামত তুলে ধরেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর বিভাগের একজন সদস্য বলেন, বৈঠকে সবার বক্তব্য গতানুগতিক ছিল। সবাই রাজনৈতিক বক্তব্যই বেশি দিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব খুবই কম ছিল। আর আজকের বৈঠকে সংগঠন, আন্দোলন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে করণীয় কী, এ তিনটি এজেন্ডা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তাই ঘুরে-ফিরে সবার বক্তব্য একই ধরনের ছিল।      

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত দখলদার সরকার রাজনীতি, অর্থনীতি ও মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরিভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। এতদিনের যে অর্জন তা তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। গণতন্ত্র একেবারে নেই। এমনকি একের পর আইন করে সাংবাদিকদের যে ন্যূনতম স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা ছিল, তা ও নষ্ট করেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে গৃহ অন্তরীণ করে রেখেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা। দেশে একটি ভয়াবহ ত্রাসের কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এদের হাত থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির ধারাবাহিক বৈঠক করছি। সেখানে নেতাদের মত নিচ্ছি। ভবিষ্যতে দলের রাজনীতি, সর্বোপরি জাতীয় রাজনীতির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাংগঠনিক বিষয়েও নেতারা বলেছেন। ধারাবাহিক বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

এএইচআর/আরএইচ