প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আগাম নির্বাচনের আভাস পাচ্ছে বিএনপি
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ হয়ত আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে যাচ্ছে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে বিএনপিকেও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতার বক্তব্যে বিষয়টি ওঠে আসে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর মুলতবি বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এরপর দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের তিন জন নেতা বক্তব্য রাখেন।
তারা বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্যে আগাম নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপিসহ সবাইকে (সব দলকে) অপ্রস্তুত রেখে আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে। তাই এই বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। ফলে আগাম নির্বাচনের বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বিএনপিকে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ৪টার দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের রাজনৈতিক কর্মকৌশল ঠিক করার লক্ষ্যে নেতাদের মতামত গ্রহণ করতে ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাত সাড়ে ৮টায় শেষ হওয়া এ বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে ৬২ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্য ২৮ জন বক্তব্য রাখেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে শেষ হওয়ার আগেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিনসহ দুই তিনজন নেতা বেরিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে একটা বার্তা আছে। সেটা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে গেছে। তাই তারা সবাইকে অপ্রস্তুত রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগাম অনুষ্ঠানের একটা পরিকল্পনা নিচ্ছে। কেউ মনে করুক আর না করুক, অন্তত পক্ষে আমি এটা মনে করি।
জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়টি বিবেচনার পরামর্শ
বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, বৈঠকে দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তাদের বক্তব্যে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক রাখা নিয়ে নতুন করে বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা বলেন, জামায়াত নিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা সামনে রেখে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া জামায়াত ছাড়া না ছাড়ার বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্তে আসা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদসহ তিনজন নেতা জামায়াত ইস্যুতে বৈঠকে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা সরাসরি জামায়াতকে ছেড়ে দিতে বলেননি। তবে ইঙ্গিতে বিএনপির জোটে জামায়াতকে না রাখার মতামত দিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ও দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বৈঠক সবার মতামতের মধ্যে দুইটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। এরপর মধ্যে একটি হচ্ছে, দলকে শক্তিশালী করে যত দ্রুত সম্ভব মাঠে নামতে হবে। আরেকটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানেই হচ্ছে, জেনেশুনে জলে ডুব দেওয়া। ফলে সরকারের কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করতে হলে বিএনপিকে মাঠে নেমেই আদায় করতে হবে। কোনো সংলাপ বা আলাপ-আলোচনা করে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে মতামত দিয়েছে নেতারা। তবে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দলের নেতাদের নিষেধ করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকের পর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বেশি কিছু এখন বলার নেই।’
বিএনপির মহাসচিব জানান, ‘বুধ ও বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর তিন দিনের বৈঠক নিয়ে বিস্তারিত গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’
এএচআর/এসকেডি