‘গৃহবন্দি’ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, আন্দোলন সংগ্রামের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রামের বিকল্প আমার কাছে নেই। আমরা তার মুক্তির চেষ্টা করছি। তবে আমি মনে করি, সেই চেষ্টা যথেষ্ট নয়। আমাদের একটিই চেষ্টা করা দরকার, সরকারের পতন। সরকারের পতন হলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।   

গয়েশ্বর বলেন, এখন আমার মনে হয় প্রতিদিন সরকারের দেওয়া ইস্যুতে আমাদের (বিএনপির) না থাকাই ভালো। এসব ইস্যু উপেক্ষা করাই ভালোই। আমাদের একটিই ইস্যু ন্যায় বিচার চাই, গণতন্ত্র চাই। গণতন্ত্রের পথে বাধা কে? শেখ হাসিনা। তার পতনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর বাইরে অন্য কোনো পথ থাকবে না।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন (মুক্তির আবেদন) করা হয়, সেই আবেদন বিবেচনায় গত এক বছর যাবত তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্ত নন, ঘরবন্দি আছেন। তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আর যে সময়টা সরকার পরিবারের আবেদন বিবেচনা করেছে, আমরা যদি সেই সময়টার দিকে তাকাই তাহলে দেখা যায়, খালেদা জিয়াকে পিজি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না এবং সরকার ঝুঁকি নিতে চায়নি বলেই একটি কৌশলের মাধ্যমে নির্বাহী আদেশ দিয়েছে। নির্বাহী আদেশটা সরকারের অধিকার। ৪০২ ধারায় সংবিধানেও সেটা লেখা আছে। কিন্তু তার বাইরে যে আদালত আছে, সেখানে জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু যোগ্যতা দরকার, খালেদা জিয়ার সবটুকু আছে।

তিনি আরও বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের বিপক্ষে যেদিন আপেল হয়, তখন তার জামিন পাওয়ার পথ উন্মুক্ত এবং যেহেতু উচ্চ আদালত কর্তৃক রায়টি মীমাংসিত নয়, সেহেতু তিনি এখনও অপরাধী নন। বিনা কারণে তাকে জেলে রাখার সুযোগ নেই, তিনি কেন, কাউকেই রাখার সুযোগ নেই। সে কারণে তিনি আদালত থেকে জামিন পেতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে একমাত্র খালেদা জিয়া যিনি আদালত থেকে জামিন পান না। যাবজ্জীবন, ফাঁসির আসামিরাও এ আদালত থেকে জামিন পাচ্ছে। প্রতিদিনই জামিন পাচ্ছে। সুতরাং আদালতের কাছে এমন কোনো আইন নেই যে খালেদা জিয়াকে জামিন দিতে পারে। সবার ক্ষেত্রে আদালত জামিনে দিতে পারে, কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে আদালত কেন কলম থামিয়ে রাখে সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রতি যে খড়গ নেমে এসেছে, তারপর থেকে সব বিচারকের সেই আশঙ্কা। ফলে তাদের বিবেক বন্ধ, তারা আইনের বই দেখে না।

বিএনপির আন্দোলনে কবে মাঠে নামবে? জানতে চাইলে গয়েশ্বর বলেন, একটি রাজনৈতিক দল সবসময় আন্দোলনে থাকে। সার্বিক দিক বিবেচনায় আন্দোলনের ধরনটা একেক সময় একেক রকম হয়। আপনি চোখে, মুখে কাপড় বেঁধে যখন মিছিল করেন, সেটাও কিন্তু আন্দোলন। কোনো আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়, আবার কোনো আন্দোলন ক্ষণস্থায়ীও হয়। সুতরাং বিএনপি আন্দোলন করতে পারে গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে।

তিনি আরও বলেন, এমন আন্দোলন দেখবেন যে আর সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ পাবে না।

সম্প্রতি বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান প্রসঙ্গে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, এ ধরপাকড় একটি বার্তা। সরকার যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন বিরোধী দলকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করে। আমি বলতে চাই, সব জেলে গেলেও এ সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী। 

এএইচআর/এসএসএইচ