দেশে কোনো রাজনীতি নেই মন্তব্য করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আমলা, ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ শাসন করছেন। সরকার আজ যেটা বলছে কাল সেটা মানছেন না। সরকার লকডাউন দিয়ে, নিজেই সেটা মানছে না।

রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ‘করোনা মোকাবিলা, শ্রমিকদের হয়রানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ নাগরিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, লকডাউন মানার জন্য গরিব মানুষের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন যত জরিমানা হয়েছে সব সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, দোকানদারের হয়েছে।

করোনা সরকারের ভুলের কারণে মানুষ মরছে বলে দাবি করে ড. জাফরুল্লা বলেন, সরকারের ভুলের কারণে শিক্ষা ধ্বংস হচ্ছে। ভুল পথে হাঁটলেও সংশোধ করা যায়, কিন্তু সরকারের সংশোধন করার কোনো ইচ্ছা নাই। সরকার জনসাধারণকে প্রজা মনে করে। কারণ প্রজার কাছে কোনো জবাবদিহি থাকে না।

রাজনৈতিক দলকে ছোট করা ছাড়া সরকারের আর কোনো কাজ নেই বলে উল্লেখ করে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রধানন্ত্রীর কথা আর কাজের মিল নেই। উনি সব সময় বলছেন, আমরা যুদ্ধে আছি, কিন্তু উনিতো যুদ্ধ দেখেন নাই।

করোনার মধ্যে সরকারের কলকারখানা খোলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, কলকারখানা খোলার ব্যাপারে কতগুলো নিয়ম আছে। শ্রমিকদের টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়া কঠিন কোনো কাজ না। গার্মেন্টস মালিকদেরও দায়িত্ব আছে। তারা যে এত দিন এত লুটপাট করেছে, বেগমপাড়া করেছে, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করেছে। যে শ্রমিকদের কাঁধে ভর করে এত কিছু করেছে, সেই শ্রমিকদের তো টিকা দিয়েই কারখানা চালাতে পারেন। টিকার টাকা তারাই জোগাড় করে দিতে পারেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর প্রমুখ।

মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনারা দেখছেন গতকাল থেকে কী একটা তুঘলকি কাণ্ড ঘটছে। হাজার হাজার লোক আসছে। কোনো একটা রেসপন্সেবল গভর্নমেন্ট এটা করতে পারে। এদিক থেকে বলা হয়েছে আপনারা যদি না আসতে পারেন কোনো সমস্যা নাই। চাকরি যাবে না। অন্যদিকে মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের টেলিফোনে করে বলছে, আজকের মধ্যেই কাজে যোগ দিতে হবে, না হলে চাকরি থাকবে না। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। আসলে তারা (সরকার) রফতানিমুখী গার্মেন্টস মালিকদের চাপ সহ্য করতে পারে না।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সরকারের অদূরদর্শিতা, জনগণকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ও সরকারের বাণিজ্যিক স্বার্থ- এ তিনটি কারণে বাংলাদেশ আজ বিপদগ্রস্ত। টিকা দেওয়ার কোনো প্রস্তুতি নাই। সরকারের কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নাই। আপনি যদি ইচ্ছা করেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবেন না, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখবেন তাহলে উপায় কিন্তু বের করা যায়।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে করোনা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক নির্যাতন করে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াশুনা বন্ধ করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার কারণে যদি পোশাক শিল্প খুলতেই হয়, তাহলে শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দিয়ে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জনগণের ভোট ছাড়া আমলানির্ভর এই সরকার যে জনগণকে, বিশেষভাবে শ্রমিকদের প্রতি কী পরিমাণ দায়িত্বহীন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তার আরেক বিভৎস দৃশ্যায়ন ঘটেছে গতকাল।

সাকি বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খেলার ব্যাপারে লাগাতা টালবাহানা করে যাচ্ছে। সরকারের বিবেচনাহীন এ সিদ্ধান্ত কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের জীবনই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমরা অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানাই।

প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সময়সীমা এবং কর্মদিন কমিয়ে এনে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন এ রাজনৈতিক নেতা।

অনুষ্ঠান থেকে অবিলম্বে দুনীতি এবং সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণে দাবি জানানো হয়।

এএইচআর/এসএম