আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ হারান ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। এরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তোলা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি ভাইরাল হওয়ায় নজরে আসে বিএনপি নেতাদেরও। এতে কিছুটা বেকায়দায় পড়েন বিএনপির অঙ্গসংগঠন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছড়িয়ে পড়া ছবিটি ২০১৭ সালের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তোলা। বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একমাত্র মেয়ে আনা কাসফিয়ার, যা ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে আয়োজিত হয়।

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দোকান

ছবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি একটি অনুষ্ঠানে তোলা ছবি। তবে সেখানে হেলেনা জাহাঙ্গীর আমন্ত্রিত ছিলেন না। তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্কও নেই।

ছড়িয়ে পড়া ছবিতে খালেদা জিয়া ও হেলেনা জাহাঙ্গীর ছাড়াও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর স্ত্রী শামীমা বরকত লাকীকে দেখা যায়।

ছবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুলতানা আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আগে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে চিনতাম না। তিনি কখনো মহিলা দলও করেননি। শুধু তাই নয়, বিএনপির কোনো অঙ্গ-সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন না হেলেনা জাহাঙ্গীর। তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে নায়িকা পরীমণিকাণ্ডে জাতীয় পার্টির নেতা নাসির উদ্দিন মাহমুদ আটকের পর ইউটিউবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের একটি বক্তব্য চোখে পড়ে। তখন থেকে মূলত আমি তাকে চিনি। আর কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলে এই ছবিটি ভাইরাল হয়। তখন আমার নজরেও ছবিটি আসে এবং আমাদের দফতর থেকে ফোন করে জানানো হয়, এটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি। আমার যতটুকু মনে পড়ে এটি ছিল মওদুদ আহমেদের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি। ওইদিন হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমার কোনো কথাও হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদা জিয়া কখনো হেলানা জাহাঙ্গীরকে চিনতেন না। এখনো চেনেন না। মূলত মওদুদ আহমদের মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর আসেন। তখন আমাদের দলের ব্যবসায়ী এক নেতা তাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ওই সময় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদও ছিলেন। এরপরই তিনি ম্যাডামের পাশে দাঁড়িয়ে ছবিটি তোলেন।

বিএনপির অপর একটি সূত্রের ভাষ্য, ২০১৪ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হননি। ওই সময় বিএনপির এক ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ হয়। তাদের মাধ্যমে মওদুদ আহমদের মেয়ের বিয়েতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের পরিচয় হয়। ছড়িয়ে পড়া ছবিটি সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে তোলা। এরপর আর কখনো খালেদা জিয়ার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দেখা বা কথাবার্তা হয়েছে বলে মনে হয় না।

কয়েকদিন আগে হেলেনা জাহাঙ্গীরও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তোলা ছবিটি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেই? তাতে কি কিছু বোঝা যায়? আমরা কি অশিক্ষিত যারা এই ভুলগুলো করছি। সবাইকে জানানোর জন্যেই বলছি, আমি আমার নেতা ও নেত্রীর কথার বাইরে এক পাও আগাই না, কাজও করি না। ওনাদের পরামর্শ নিয়েই সব কাজ করি। যারা আমাকে নিয়ে লিখেছেন তারা আমাদের আওয়ামী লীগের। আমার বোধগম্য হয় না কীভাবে তারা ঘরের মানুষের পেছনে লেগে থাকে। যাই হোক আল্লাহ হেদায়েত করুন।

তিনি আরও লেখেন, আবারও বলছি, এর আগেও বলেছি, খালেদা জিয়া ও অন্যান্যদের সাথে যে ছবিগুলো ভাইরাল হচ্ছে, সেটা বিয়েতে এসেছিল তখন তোলা। এ ছবিগুলো আমি নিজেই ফেসবুকে দিয়েছিলাম। আমার কিছুতে গোপনীয়তা নেই। আর আমি একজন প্রকৃত ১০০% ব্যবসায়ী ও সরকারের একজন কমার্শিয়াল ইম্পরট্যান্ট পারসন (সিআইপি)... সেখান থেকে রাজনীতিতে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ছোট বেলা থেকেই।

যদিও পরবর্তীতে হেলেনা জাহাঙ্গীর তার ফেসবুক থেকে এই পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন।

এএইচআর/এসএসএইচ/জেএস