ইনসেটে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী

সরকারি দফতরে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। সোমবার (২৮ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। 

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে আরও দূর এগিয়ে যেত। এমন কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা ক্ষেত্র নেই যেখানে ঘুষ ছাড়া কেউ কোনো কাজ করাতে পারেন। আর কেউ পারলে তিনি ভাগ্যবান। এখন সরকারি দফতরে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না 

তিনি বলেন,  ভূমি অফিসে গেলে এসিল্যান্ডকে ঘুষ দেওয়া লাগবে। আরেক জায়গায় গেলে তহশিলদারকে ঘুষ দিতে হবে। একটু বড় কাজ হলে ইউএনওকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) টাকা দেওয়া লাগবে। আরও বড় হলে ডিসিকে টাকা দেওয়া ছাড়া হবে না। আর থানায় তো আছেন দারগা বাবুরা। আপনি মার খাবেন, আপনার লোক আহত হবে, নিহত হবে, তারপরও এফআইআর করতে গেলে আগে টাকা তারপর কথা। 

জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, ব্রিটিশ আমলেও সবাই ঘুষ খেতেন না। পাকিস্তান আমলেও সবাই খেতেন না। এখন প্রত্যেকেই খান। ওখান (থানা) থেকে শুরু করে সার্কেল এএসপি, এডিশনাল এসপি, এসপি। আর কতদূর উপরে আছে জানি না। এর উপরে বললে লাভ কী?

তিনি বলেন, বন, ভূমিসহ অন্য যে দফতরে যাব, একই অবস্থা দেখব। জনপ্রশাসনেও করাপশন (দুর্নীতি)। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। তাহলে দেশটা কে সুন্দর করবে? বাইরের মানুষ এসে? জাপান থেকে এসে কেউ করবে?

আমলাদের সমালোচনা করে এ সংসদ সদস্য বলেন, আমলারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখানে বেগম পাড়া নিয়ে বক্তৃতা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আছে, কানাডায় বেশি। কেউ বলেন এ সংখ্যা কয়েক হাজার। আর এক সমীক্ষায় এসেছে কয়েকশ। একজন বলেছেন, এক হাজারের ওপরে বেগম পাড়া রয়েছে কানাডায়। কারা করেছেন? তারা কি সবাই এমপি? নো। ম্যাক্সিমাম সরকারি কর্মকর্তা। কিছু ব্যবসায়ী। আর কিছু আমাদের নষ্ট রাজনীতিবিদ। সবচেয়ে বেশি হচ্ছেন আমলা-সরকারি কর্মচারীরা। তারা দুর্নীতি করে আগে স্ত্রীর নামে বাড়ি কেনেন, ছেলেকে পাঠান। পরে নিজে যান।

তিনি বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে না পারলে দেশের অর্থনীতি সুন্দর করা যাবে না। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। অনেক দয়া দেখানো হয়েছে। আর দয়া বা ক্ষমা নয়। দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নত হয়ে কথা বলতে হলে এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।

স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির ফরাজী বলেন, সার্জিক্যাল মাস্কের দাম কোনোটি চার টাকা, কোনোটির দাম একটু বেশি। কিন্তু মন্ত্রণালয় এগুলো কিনেছে সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ টাকা করে। প্রতিটি মাস্ক থেকে সত্তর থেকে আশিগুণ টাকা লুটপাট হয়েছে। তারা আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন বুঝে না। করোনার সময় যদি কেনাকাটায় আকাশচুম্বী দুর্নীতি থাকে তাহলে দেশ সামনে যাবে কী করে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কী করে বাস্তবায়ন হবে?  

তিনি বলেন, আজ যারা মন্ত্রী আছেন, তাদের দায়বদ্ধতা কী? সবাই গিয়ে হাত তোলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী কি মাস্ক কিনবেন? তিনি কি ভূমি অফিসের তহশিলদারের ঘুষ ঠেকাবেন? তিনি কি ওসি/এসপির ঘুষ ফেরাবেন? হয়ার আর দ্য মিনিস্টার্স? হয়াট ইজ হিজ ডিউটি? তারা কি রুলস অব বিজনেস পড়েন? অনেক ভালো মন্ত্রী এখানে রয়েছেন। তাদের সালাম করি। তাদের লাইফস্টাইল শুনলে ভালো লাগে। কিন্তু যারা চালাতে পারেন না, হয় তারা নিজেরা দুর্নীতি করেন, নয়তো দুর্নীতির কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

তিনি বলেন, করোনার টিকার ২৫ কোটি ডোজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে আনতে হবে। এজন্য যত টাকা দরকার আমরা দিতে রাজি। দরকার হলে মেগা প্রজেক্ট কমাতে হবে।


এইউএ/আরএইচ