শয্যাশায়ী বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের রাজনীতিতে ফেরা অসম্ভব
গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় বিছানায় শয্যাশায়ী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়াসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এ মন্ত্রী। এখন বিছানা থেকে উঠতে, এমনকি ঠিক মতো কথাও বলতে পারেন না। রাজধানীর ইস্কাটনের বাসিন্দা প্রবীণ এ আইনজ্ঞের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে বাথরুমের কাজ সবই বিছানায় সারতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজনীতিতে ফেরা তার জন্য শুধু দুষ্কর নয়, এক প্রকার অসম্ভব। এছাড়া পরিবারের সদস্যরাও চান না তিনি আর রাজনীতিতে যুক্ত হন।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় তিনি সুস্থ ছিলেন। কারাগারে অবস্থানের কিছুদিন পর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন জানা যায়, তার মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় ভেঙে গেছে। কিন্তু কীভাবে এটা হয়েছে তার কোনো জবাব দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
হাড় ভেঙে যাওয়ায় তার মস্তিষ্কের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকা, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় চিকিৎসা করানো হলেও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এদিকে বয়স বেশি হওয়ায় মেরুদণ্ডের ভাঙা হাড়ের অপারেশনও করা সম্ভব হয়নি। তিনজন মানুষ সার্বক্ষণিক তার সেবা-শুশ্রূষায় নিয়োজিত আছেন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কুমিল্লা-৩ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকারের (১৯৯১-৯৬) মন্ত্রিসভায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামেরও নেতা ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন দেশের বিশিষ্ট এ আইনজ্ঞ
রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শাহিদা রফিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তিনি এতটাই অসুস্থ যে তাকে ধরে-বসিয়ে খাওয়া-দাওয়া করাতে হয়। এক কথায় তাকে বিছানার বাইরে নেওয়া সম্ভব নয়। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ায় প্রস্রাব-পায়খানা কখন হয়, সেটা তিনি নিজেও বলতে পারেন না।
‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কারাগারে থাকাকালে তার মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় ভেঙে যায়’ বলে দাবি করেন শাহিদা রফিক। বলেন, ‘সুস্থ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন কারাগারের কনডেম সেলে রাখার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। তখন চিকিৎসকরা জানান, তার মেরুদণ্ডের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর হাড় ভেঙে গেছে। কীভাবে হয়েছে— চিকিৎসক এবং কারা কর্তৃপক্ষ কেউ কিছু বলেনি। হাড় ভেঙে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কে অপারেশন করে একটি পাইপ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সেখানে জমে থাকা পানি পাকস্থলী হয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের কোথাও তার মেরুদণ্ডের অপারেশন করা যায়নি।
এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেননি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। করোনাকালে নেতারা ভার্চুয়ালি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও বিভিন্ন আলোচনা সভায় নিয়মিত যুক্ত থাকলেও গুরুতর অসুস্থ এ নেতার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিককে কুমিল্লা-৩ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনের পর এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে টুকটাক যোগাযোগ থাকলেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের দুই ছেলে আমেরিকা ও লন্ডনের নাগরিক। তাই আপাতত বলা যায়, শুধু রফিকুল ইসলাম মিয়া নন, এ পরিবারের কেউই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় নন।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি ঠিক মতো কথা বলতে পারেন না। কয়েক বছর হলো দলের স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠকেও অংশ নেন না।
জানতে চাইলে স্ত্রী শাহিদা রফিক আরও বলেন, তিনি দেশের জন্য যথেষ্ট করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তার আজ এ অবস্থা। বিদেশে থাকা আমাদের ছেলেরাও চায় না তিনি আর রাজনীতি করুক। যতদিন তিনি বাঁচেন, রাজনীতির বাইরে থাকবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার লোকজনের কারণে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু জয়ী তো হতে পারিনি। এখনও এলাকার লোকজন সব সময় ফোন করে। এছাড়া সেখানকার স্কুল ও মাদরাসা কমিটির চেয়ারম্যান আমি। তাই এলাকায় যেতে হয়। বাকিটা আগামীতে দেখা যাবে।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কুমিল্লা-৩ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকারের (১৯৯১-৯৬) মন্ত্রিসভায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামেরও নেতা ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন দেশের বিশিষ্ট এ আইনজ্ঞ।
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতার হলে আইনজীবী হিসেবে তার পক্ষে লড়েন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
এএইচআর/এসএম/এমএআর/এমএইচএস