এই বাজেটে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে
‘এই বাজেট জনবান্ধব নয় এবং এতে সাধারণ মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। বরং হতাশা বেড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া।
সোমবার (৭ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর ‘তারুণ্যের বাজেট পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রণয়নে অদক্ষতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অপরদিকে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেননি। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি সময়োপযোগী বাজেট নয়।
এছাড়া বাজেটে উচ্চশিক্ষায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কর আরোপ যুক্তিসঙ্গত হয়নি উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যদিও সরকার বলছে এই কর মালিকপক্ষ তাদের মোট লভ্যাংশ থেকে দেবে কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যাবে তার উল্টো অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা ঠিকই শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিবেন। এতে অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বাজেট পর্যালোচনা আলোচনায় লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে বাজেটের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়। কিন্তু এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আছে মাত্র ১১.৯২ শতাংশ। যা আশঙ্কাজনক। আবার শিক্ষাখাতে যত প্রকল্প নেওয়া হয় তার বড় অংশই বাস্তবায়ন হয় না। ২০২০-২১ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ৩৬.২২ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ করেছে মাত্র ৪৯.৭৬ শতাংশ। কিন্তু যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা অন্যান্যদের চিত্র এরকম নয়।
এছাড়াও বাজেটের ত্রুটিপূর্ণ নানা দিক আলোচনা করে প্রস্তাবনা পেশ করেন ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, সরকার এবারের বাজেটকে ‘ব্যবসাবান্ধব বাজেট’ বলছে। কিন্তু আমরা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখতে পেলাম এ বাজেটে কেবল গুটিকয়েক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আরও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সরকারের প্রণোদনার টাকাও তাদের পকেটেই ঢুকেছে। অথচ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এসব শিল্পের অবদান মাত্র পাঁচ শতাংশের কিছু বেশি।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। করোনার কারণে দীর্ঘসময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশই ঝরে পড়েছে। সেশন জটের কবলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবন অন্ধকারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এবারের বাজেটে শিক্ষাখাত নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এক্ষেত্রে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে বটে, তবে পরিস্থিতির উত্তরণে কোনো পরিকল্পনা বাজেটে নেই। এমনকি বাজেটে শিক্ষাখাত নিয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি অর্থমন্ত্রী। এমন অবস্থায় জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় বাজেট পর্যালোচনার আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজোয়ানা হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক মো. রাশেদ খান, ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, যুব পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লাহসহ প্রমুখ।
আরএইচটি/এইচকে