যারা গুম হয় তারাই জানে এর কী কষ্ট
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যারা গুম হয়, তারাই জানে এর কী কষ্ট। যারা ক্ষমতায় আছে তারা সেটি অনুমান করতে পারবেন না।
শুক্রবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাক আয়োজিত আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ২০ জুন থেকে নিখোঁজ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, বাবাকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ করেছি আমরা। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলেও এখনও আমার বাবাকে ফিরে পাইনি।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমার বাবা ও তার গাড়িচালক গুম হন। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ অন্যায়ের প্রতিকার পেতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যতবারই এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে ততবারই আমি এসেছি। প্রত্যেকবারই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখতে হয়েছে। প্রতিবছরই বুক চাপড়ে গুম হওয়াদের ফিরে পাওয়ার আর্জি জানিয়েছেন স্বজনরা। তারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমরা আমাদের স্বজনদের খবর জানতে চাই।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যখন গুম নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি বলেন আমাদের দেশে গুম, খুন বলে কিছু নেই। আমাদের দেশের কিছু মানুষ জমিজমা নিয়ে বিরোধ, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। এগুলো নিয়েই সবাই কথাবার্তা বলে। তার এ বক্তব্যের ধিক্কার জানাই আমরা। এ সরকার মানবিক সরকার নয়। মানুষ মরে যায় রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে কোনো রকম দুঃখ প্রকাশ করে না। এখানে প্রস্তাব রাখতে চাই, একদিন কোথাও কয়েক ঘণ্টা অবস্থান নিন। ঢাকাবাসীকে বলেন, আমাদের হারানো স্বজনদের ফিরে পেতে একাত্মতা ঘোষণা করেন। সরকারকে এভাবে চাপ দিতে না পারলে কোনো কাজে আসবে না।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা প্রসঙ্গে মান্না বলেন, যারা মনে করেন রোজিনা ইসলামকে শেখ হাসিনা দয়া করে ছেড়ে দিয়েছেন, তারা ভুল বলেন। দালালগুলো এমন কথা বলতে পারে। সাংবাদিকদের মধ্য যারা দালাল আছে তারাও এ কথা বলতে পারে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, রোজিনা ইসলামকে ছেড়ে না দিলে বিপদ আরও বাড়তে পারতো।
সমাবেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, এখানে অনেকে আমাদের সঙ্গে রয়েছে, যারা জানে না তাদের স্বজনরা কোথায়। নিখোঁজদের খোঁজে বের করার কোনো উদ্যোগ নেই। যে মানুষের মাঝে এ ধরনের শূন্যতা রয়েছে, তা কীভাবে সরকার পূর্ণ করবে?
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও নিখোঁজদের ছবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। শুধুমাত্র ভিন্নমত ও রাজনীতির কারণে তাদের গুম করা হয়েছে। বিরোধীদলের মনোভাব ভেঙে দিতে এমন করা হয়েছে। শুধু গুম, খুনেই শেষ নয়, তাদের ধরে নিয়ে রিমান্ড দিয়ে ‘আর রাজনীতি করবি না বলে স্বীকারোক্তি নিচ্ছে’। ‘এবার কম দিয়েছি এরপর এলে আরও বেশি দেবো’ এ রকম কথাও বলা হয়।
মায়ের ডাক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি