হাসপাতালে খালেদা জিয়ার এক মাস
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ ২৭ মে তার হাসপাতাল-বাসের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এক মাসের চিকিৎসায় করোনমুক্ত হওয়াসহ খালেদা জিয়ার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উন্নতির এই প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ‘খুব ধীর গতিতে’ উন্নতি হচ্ছে। এখনো তার শরীরে পোস্ট-কোভিড বেশকিছু জটিলতা রয়েছে। তার হার্ট ও কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যার চিকিৎসা চলছে।
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থায় ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে সিসিইউর বাইরে রেখে চিকিৎসা দেওয়াটা এখনো নিরাপদ মনে করছেন না চিকিৎসকরা। তাই আরও কিছুদিন তাকে সিসিইউতে থাকতে হবে। এরপর শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে সিসিইউর বাইরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া নিরাপদ মনে করছি না আমরা। কারণ তার হার্ট, কিডনি ও ফুসফুসের যে অবস্থা, তাতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে, তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি।
চিকিৎসকরা বলছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। কারণ তিনি যেসব রোগে আক্রান্ত সেগুলোর উন্নত চিকিৎসা দেশে পর্যাপ্ত নয়। তার এসব রোগের চিকিৎসা আগে আমেরিকা, লন্ডন ও সৌদি আরবে হয়েছে। আগে যেসব চিকিৎসক তার চিকিৎসা দিয়েছেন, তারাই রোগের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন এবং ভালো চিকিৎসা দিতে পারবেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বারবার সরকারের অসহযোগিতার কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন। গত কয়েক বছরে একাধিকবার দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ এবারও তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন।
তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার লিখিত আবেদনও করেন। কিন্তু সরকার আইনি বাধার অজুহাত দেখিয়ে অনুমতি দেয়নি। তারপরও দলের নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে তাকে বিদেশে নেওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের আগে যে অবস্থা ছিল, এখনও সেই অবস্থাই আছে। খুব বেশি উন্নতি হয়নি। বিদেশে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা প্রতিদিনই তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দিচ্ছেন। সেখানে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা বারবার বলছি। কিন্তু সরকার প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। করোনার উপসর্গ খুব একটা না থাকায় তাকে নন-করোনা কেবিনে রাখা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ৩ মে খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এখনো সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
এএইচআর/আরএইচ/জেএস