বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের মতোই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি গত দুদিন আগে ম্যাডামের অবস্থা আপনাদের জানিয়েছি। এখনও তিনি একই অবস্থায় আছেন। কোনো পরিবর্তন নেই।

রোববার (২৩ মে) দুপুরে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গেল শুক্রবার প্রেস ক্লাবে এক সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার শরীরে জ্বর নেই, শ্বাসকষ্টও নেই। কিন্তু পোস্ট কোভিড জটিলতার জন্য তিনি হার্ট ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, চিন্তিত।

গতকাল একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে খালেদা জিয়া একটু হাঁটতে পারছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি এরপরে তাকে দেখতে যাইনি। এই বিষয়ে জানি না, হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার এখন যে চিকিৎসা চলছে সেখানে একটু ফিজিওথেরাপি দেওয়া, একটু হাঁটাহাঁটি করানো হচ্ছে। কিন্তু এখনও তার লাঞ্চে পাইপ দেওয়া আছে।

সাংবাদিক রোজিনার জামিনের রায় ‘ফরমায়েশি’

সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার অভিযোগে’ অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের রায় ‘ফরমায়েশি’ বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা এখান কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। যে আইনে তাকে (রোজিনা ইসলাম) গ্রেফতার করা হয়েছে সেই আইন কিন্তু জামিনযোগ্য। সেই ব্রিটিশ আমলের এই আইন তারা প্রয়োগ করেছে। এটাতে জামিনযোগ্য সেকশন আছে। সেখানে আপনি জামিন দিচ্ছেন না, একদিন করে পেছাচ্ছেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কার কাছ থেকে নির্দেশ আসে তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আপনি জামিন দিলেন এই শর্তে যে, বিদেশে যেতে পারবে না ও ৫ হাজার জামানত। কেন বিদেশ যেতে পারবে না? এই রায় অবশ্যই ফরমায়েশি রায় বলে আমরা মনে করি।’

সাংবাদিকদের বর্তমান অনৈক্য রয়েছে বলে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগেও বলেছি, আজকেও বলছি- আপনাদের দুর্বলতার জন্য এগুলো হচ্ছে। ইউ আর নট ইউনাইটেড। আপনাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারছেন না। আগে যেভাবে নিজের স্বার্থের জন্য দাঁড়াতেন সেই স্বার্থের জন্য আজকে আপনারা ইউনাইটেডলি দাঁড়াতে পারেন না। কালকে দেখলাম রোজিনার ঘটনায় নেগোসিয়েট করা হচ্ছে। কে নেগোসিয়েট করছেন?  ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি কী করেছিলেন সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যার আন্দোলনের সময়ে? আন্দোলনের কয়েকদিন পরে তিনি এডভাইজার হয়েছিলেন। তারাই যদি আজকে নেগুসিয়েট করে সরকারের সঙ্গে, যারা একেবারে লেজুড়বৃত্তি করে। তাহলে এরচেয়ে রেজাল্ট কি পাবেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে রায় হচ্ছে, এই কথাটা এজন্য আসছে। এটা আপনাদের নিজেদের অনুধাবন করা উচিত ‘ফর এক্সিসট্যান্স অব এ ফ্রি মিডিয়া। নির্ভয়ে কাজ করার জন্য আপনাদের ঐক্য প্রয়োজন।’ 

আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করেছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আইন করে বন্ধ করেছে। আপনারা ৭৫ সালের বাকশালের শুনেছেন ও পড়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পরেই দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা, বাংলাদেশ টাইমস বন্ধ করে দিয়েছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর তো একের পর এক পত্রিকা, অনলাইন ও টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। এখনও কারাগারে আছেন সংগ্রামের সম্পাদক। অনেক সাংবাদিককে দেশে থেকে চলে যেতে হয়েছে। কারণ কি তারা যেসব রিপোর্ট করেছে যেগুলো তাদের (সরকার) পক্ষে ছিলো না। তাদের চুরি, দুর্নীতি, অন্যায়, খুন ও রাহাজানির বিরুদ্ধে তারা রিপোর্ট করেছিল। সে কারণে সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে ৯ বছর হলো সরকার এখনও হত্যাকারীকে খুঁজে পায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মুহূর্তের মধ্যে খুনি ধরে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে তারা আগামও জেনে যায়। কিন্তু সাগর-রুনির হত্যাকারীদের খুঁজে পায় না। কারণ হচ্ছে তারা এমন কিছু রিপোর্ট করেছিল যেগুলো তাদের (সরকার) ভিত্তি নড়ে যেত, আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য এসেছিল। ঠিক একইভাবে রোজিনা ইসলাম অনেকগুলো রিপোর্ট করেছে, যেগুলোতে সরকারের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।’ 

আওয়ামী লীগ প্রতিরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা সবখানে বিএনপি বিএনপি দেখনে। সবখানে ষড়যন্ত্র দেখেন। এত ভয় কেন? কারণ আপনাদের পেছনে জনগণ নেই। আপনারা আছেন আমলাদের নিয়ে। তাদের নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। তারা গোয়েন্দা লাগিয়ে দেন। তারা আপনাদের (সাংবাদিকদের) সব সময় ফোন করে বলেন- এটা দেওয়া যাবে না, ওটা করা যাবে না। আপনারা স্বীকার করেন আর না করেন, এটাই বাস্তবতা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি কেউ কোনো দিন এ রকম অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকেন পারেনি। হ্যাঁ, কেউ আগে, কেউ পরে বিদায় হয়। কিন্তু সেই বিদায়টা সুখকর হয় না কখনও।’ 

এএইচআর/ওএফ