বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এই গ্রুপের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় তিন নেতাকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। আজ (বুধবার) তাদের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এখন শোনা যাচ্ছে বিলুপ্ত কমিটি ফের গঠন করতে দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। ওই তৎপরতায় যুক্ত আছে এস আলম-সংশ্লিষ্ট নেতাদেরই আবার কমিটিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি চিঠিতে চট্টগ্রামের তিন নেতার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দলীয় পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ তিনজন হলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পটিয়ার এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া। এই তিনজনেরই এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সখ্য আছে বলে স্থানীয় বিএনপিতে আলোচনা আছে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দল আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে পদ ফিরিয়ে দিয়েছে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণ জেলার ৩ নেতাকে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি দেওয়া হবে। তবে আজ কিংবা কাল দেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। কমিটিতে কাদের রাখা হবে সেটিও আমি জানি না।

বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন মডেলের ১৪টি দামি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। ছবি- সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিএনপির কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, পদ ফিরে পাওয়া তিন নেতার একজনকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বা সভাপতির পদে বসাতে তৎপরতা চালাচ্ছেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। নতুন কমিটিতে এস আলম-সংশ্লিষ্ট নেতাদেরই আবার পদে বসাতে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক নেতা লন্ডনে উড়াল দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এ ব্যাপারে ‘ম্যানেজ’ করবেন বলে অন্যরা আশা করছেন।

চট্টগ্রাম বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ (বুধবার) বা কালই দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি হতে পারে। এতে এস আলমের কাছের মানুষ এনামুল হককে সভাপতি বা আহ্বায়ক করার জোর প্রচেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ড গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে। এ কারণে এনামসহ ৩ জনের সদস্যপদ তড়িঘড়ি করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এস আলম-সংশ্লিষ্টরা পদে এলে দল সমালোচনার মধ্যে পড়বে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এস আলম গ্রুপের জ‌মি ও সম্পদ না কেনার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছেন। এভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না জানা নেই। এখন এস আলমের নামে–বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তাই এই মুহূর্তে এস আলমের সম্পদ যেন কেউ না কেনেন।

এর পরদিন ২৯ আগস্ট দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের একটি ওয়্যারহাউস থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য মামুন মিয়াসহ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার উপস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন মডেলের ১৪টি দামি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

এতে নড়েচড়ে বসে বিএনপির হাইকমান্ড। ৩১ আগস্ট এস আলম-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারায় ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এমআর/এমএসএ