প্রশ্ন জামায়াত নেতা বুলবুলের
অন্য দলের নেতাদের মামলা প্রত্যাহার হলেও জামায়াতের হয় না কেন?
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামলা প্রত্যাহার হলেও, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামসহ রাজনৈতিক নেতাদের মামলা কেন প্রত্যাহার হয় না? সে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, কোনো দল বা বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের চাপে যদি জন-আকাঙ্ক্ষার বাইরে কাজ অব্যাহত থাকে, তবে ছাত্র-জনতা আবারো মাঠে নামবে। তাই জন-আকাঙ্ক্ষার বাইরে কোনো কাজ না করতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ওয়ারী থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
আওয়ামী লীগসহ তাদের সহযোগী সব দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে দাবি জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন নয়; আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সব দল ও সংগঠনকে গণহত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদেরকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে বিচারিক হত্যা করার মাধ্যমে ওই ট্রাইব্যুনালের আওয়ামী দলীয় বিচারক, প্রসিকিউটর ও সাক্ষীরা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ছাত্রশিবিরের সাবেক এ কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রতিটি হত্যা, খুন, গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বলেন, এদেশে মুসলিম-অমুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যেই অটুট বন্ধন সেটি অব্যাহত রেখে সব ধর্মের মানুষকে নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রের দিতে হবে। রাষ্ট্রের কাছে সবাই নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ও মর্যাদা লাভ করবে। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নাগরিক হিসেবে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ওয়ারী অঞ্চল মাদকের কারখানা, সন্ত্রাসের আবাসস্থল। একদল, এক ব্যক্তি এই মাদক আর সন্ত্রাসের গডফাদার ছিল। ছাত্র-জনতা ওই দলকে, ওই ব্যক্তিকে দেশ ছাড়া করেছে। তবে মাদক আর সন্ত্রাসমুক্ত হয়নি। মাদক আর সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এদেশ মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বৈষম্যমুক্ত হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াত চার দফা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। জামায়াত সুদমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তুলেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতিষ্ঠা করা সেই ব্যাংকসহ দেশের সব ব্যাংক-বিমা লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা, শেয়ার বাজার এমন এক দরবেশের হাতে তুলে দিয়েছে যেই দরবেশ শেয়ার বাজারের সঙ্গে সঙ্গে হাসিনার চেয়ারও খেয়ে ফেলছে। ক্ষমতা হারিয়ে দরবেশের লেবাস নিয়ে আর পালাতে পারেনি। যে যতবড় স্বৈরাচার তার পতন ততই নিকৃষ্ট আর নির্লজ্জতার সঙ্গে হবে। ভবিষ্যতে যদি কেউ স্বৈরাচার হয়ে উঠে তাকে এদেশের পথশিশুরা বিতাড়িত করবে। ছাত্র-জনতাকে মাঠে নামতে হবে না।
তিনি আরো বলেন, ইসলামের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে না পারলে এদেশের মানুষকে আবারো জীবন ও রক্ত দিতে হবে। শান্তি আসবে না। শান্তির জন্য ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে।
জামায়াত এদেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দুই টাকাও দুর্নীতি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। জামায়াতে ইসলামীর অতীতের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে তিনি আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সমর্থন দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
ওয়ারী পশ্চিম থানা আমির মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন ও ড. মুহাম্মদ আবদুল মান্নান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান।
জেইউ/জেডএস