বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম তা হাইজ্যাক করা হয়েছিল। সেই স্বাধীনতার সুফল দেশের আপামর জনগণের কাছে পৌঁছাতে দেওয়া হয়নি। একটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষ অবদান রাখেন। তেমনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামেও গোটা জাতি ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু এই অবদানকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ দল তাদের দলীয় এবং পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিলেন।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের উত্তরা অঞ্চলের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় প্রতিপক্ষকে স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকার বানানোর জন্য চেষ্টা করেছে। কেউ যদি তাদের মতের বিপক্ষে গিয়েছে তাকে রাজাকারের খেতাব দেওয়া হয়েছে। এমনকি সেক্টর কমান্ডার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও রাজাকার বলতে তারা কুণ্ঠাবোধ করেননি। মূলত, যারাই আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছে, সত্য কথা বলেছে তাদেরকেই রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী তকমা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারা বিরোধী মতের মানুষদের সঙ্গে জঙ্গিবাদের তকমা যুক্ত করেছিল। অথচ শেখ হাসিনা তার শাড়ির নিচে জঙ্গিবাদ তৈরি করেছিল। এই দেশে যদি জঙ্গিবাদ বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে তার একক মালিকানা শেখ হাসিনার। তিনি জঙ্গি নাটক সাজিয়ে দেশের যতগুলো নিরপরাধ মানুষকে খুন করেছেন তার জন্য তাকে ১০০ বার ফাঁসি দেওয়া হলেও কম হয়ে যাবে। আসলে জঙ্গিবাদের মূল নায়ক হচ্ছেন তিনি।

আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আপনারা দেখেছেন, শিক্ষার্থীরা মেধার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য আন্দোলন করেছে। তখন তিনি (শেখ হাসিনা) তাদেরকেও রাজাকারের তকমা দিয়েছেন। ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না তো রাজাকারের নাতিরা পাবে?’— এই মন্তব্য যেদিন শেখ হাসিনা করেছেন সেদিনই তার কপাল পুড়ে গেছে। রাজনীতির ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান যদি তার মধ্যে থাকতো তাহলে সেদিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ করতো। তাহলে এতগুলো মানুষের জীবন দিতে হতো না। তাকেও দাদার বাড়িতে পালিয়ে যেতে হতো না। অবশ্য শেখ হাসিনাকে ভারত থেকেই পুশ করা হয়েছিল। আমরা আবার তাকে তার আসল জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। সুতরাং প্রমাণিত হয়েছে যে, অতিমাত্রায় চালাকি করে কোন লাভ হয় না। জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে এবং দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এমন কোন কাজ বাকি নেই যা আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। এমনকি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ঈদের নামাজ পড়তেও বাঁধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সবশেষ বাংলাদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছে। জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতা পেলে যদি কুক্ষিগত করা, এক দলে পরিণত করা, বাকশাল কায়েম করা বা ফ্যাসিবাদী চরিত্রের পরিচয় ভবিষ্যতেও কেউ দেয় তাহলে তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতোই হবে।

সেলিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি হলো মিলেমিশে চলার ও সহনশীলতা বজায় রাখার রাজনীতি। এখানে সবাই সৌহার্দ্যের ও সম্প্রীতির রাজনীতি করে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি করার মানসিকতা পোষণ করে তবে তাদের পরিণতিও শেখ হাসিনার মতোই হবে। অতীতে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পুলিশসহ প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তেমনিভাবে আগামীর বাংলাদেশও যদি কেউ কুক্ষিগত করতে চায় তাদেরও রক্ষা হবে না। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। কোন বিশেষ দল কিংবা কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের মালিক হতে পারবে না। বাংলাদেশকে চালাবে বাংলাদেশের জনগণ।

একইসঙ্গে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে দেশের ১৮ কোটি মানুষ উপকৃত হবে এবং ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি এ এইচ এম আতিকুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী উত্তরা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম, মহানগর মজলিসে শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, মাজহারুল ইসলাম, আবু সাঈদ, মতিউর রহমান প্রমুখ।

আরএইচটি/এআইএস