বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতারাসহ দেশের ইসলামী দলগুলোকে নিঃশেষ করে শেখ হাসিনা এ দেশে একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে চেয়েছিলেন। এজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামে দলীয় বিচারক, দলীয় প্রসিকিউটর দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। সেই ট্রাইব্যুনালে দলীয় সাক্ষী দিয়ে সাজানো মামলায় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ জামায়াত নেতাদের বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টন কলেজ মাঠে পল্টন থানা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, হাসিনার গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা সাজানো মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটর, সাক্ষীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

গোলাসম পরওয়ার আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করছে না, তবে কালক্ষেপণও চায় না। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হবে না। আবার নির্বাচনে কালক্ষেপণ হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা।

এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগ মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করেছে।

জামায়াত-শিবির রাজপথ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সংগঠনের নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেনি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গেও আপস করেনি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা জীবন ও রক্ত দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে রেখেও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এক মিনিটও টিকতে পারেনি। লক্ষণ সেনের মতো শেখ হাসিনা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে। পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে এখন দেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আনসার লীগ, রিকশা লীগ, এই লীগ সেই লীগ সবশেষ ইসকন ইস্যুকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা দেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ ব্যতীত এ দেশে কেউ হিন্দুদের সম্পদ দখল করেনি, হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর করেনি। 

বুলবুল বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে হিন্দুদের বারবার ব্যবহার করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে দাঙ্গা লাগানো যাবে না। ভারতে মুসলিমদের ওপর সেখানকার হিন্দু জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্র জুলুম-নির্যাতন করছে। মসজিদ ভেঙে দিচ্ছে। সেই ভারত থেকে আমাদের সম্প্রীতি শিখতে হবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, গণহত্যার দায়ে খুনি হাসিনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও ভারত তাকে আশ্রয় দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেনি এবং চায় না। তাদের বন্ধুত্ব শুধুই আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ভারত যদি এ দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়, তবে খুনি হাসিনার বক্তব্য প্রচার করতে দিতে পারে না, হাসিনার বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে সমর্থন ও সহযোগিতাও থাকতে পারে না।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের অর্জিত বিপ্লব বিশ্ববাসী অনুসরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিরিয়া আমাদের অনুসরণ করে সেখান থেকে স্বৈরাচার বিতাড়িত করেছে। একে-একে ফিলিস্তিনিসহ সব দেশ স্বৈরাচার ও দখলদার মুক্ত হবে এবং ইসলামের বিজয়ের পতাকা অচিরেই উড়বে।

পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতারা।

জেইউ/এআইএস