শুধুমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা জীবন দেয়নি। তাই আগে সংস্কার পরে নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। 

তিনি বলেন, দেশে আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে, পরে নির্বাচন হবে। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন দিলে ছাত্র-জনতার কোনো প্রত্যাশাই পূরণ হবে না।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা জামায়াতে ইসলামি আয়োজিত কর্মী সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন; ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার। কিন্তু কেউ কেউ সংস্কারের আগেই নির্বাচনের জন্য লাফালাফি করছে। যত লাফালাফি করা হোক না কেন সংস্কারের আগে নির্বাচন দেওয়া যাবে না। ছাত্র-জনতা ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য জীবন ও রক্ত দেয়নি। ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করতেই জীবন ও রক্ত দিয়েছে।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, গত ১৫ বছর প্রশাসনে আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন ব্যতীত সাধারণ জনগণকে নিয়োগ দেয়নি। ক্ষমতা দখল করে রাখতে এই নিয়োগ প্রাপ্তরা শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে। তারা ভেবেছে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিলে তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী থাকবে। কিন্তু এ দেশের জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। জনগণ আওয়ামী লীগকে বিদায় করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছ। এখন তাদের বড় দায়িত্ব হলো আওয়ামী দূষিত লোকদের প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করা। 

মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল সেই বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরেও স্বাধীন দেশ বৈষম্যমুক্ত ছিল না। স্বাধীনতার মাত্র দুবছরের মাথায় পিতা কায়েম করেছে বাকশাল আর সেই ধারায় মেয়ে কায়েম করেছে ফ্যাসিবাদ। তবে হাজারও জীবনের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা যে নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা রক্ষায় প্রয়োজনের জামায়াতের প্রতিটি কর্মী শহীদ হতে প্রস্তুত আছে।

কেন্দ্রীয় এই জামায়াত নেতা বলেন, মানুষের ভুল হয় বলেই মানুষের তৈরি আইনেও ভুল রয়েছে। যার কারণে মানুষের তৈরি আইনে শান্তি আসে না এবং আসবে না। শান্তির জন্য প্রয়োজন আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা। শেখ মুজিব সোনার দেশ চেয়েছে কিন্তু সোনার মানুষ বানায়নি। চোর-ডাকাতের দল বলে নিজেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্বোধন করেছেন। সেই চোর-ডাকাতের দল দিয়ে সোনার দেশ গঠন সম্ভব হয়নি, হবেও না। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি আগে সোনার মানুষ তৈরির কাজ করেছে। এবার সোনার দেশ গঠনে কাজ করতে চায়। জনগণ যদি সেই সুযোগ দেয় তবে জামায়াতে ইসলামির নেতৃত্বে সোনার বাংলাদেশ গঠন করা হবে। যেখানে কোনো বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, জুলুম, নির্যাতন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকবে না। 

তাই জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের জন্য জনমত গঠন করতে তিনি আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমির মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন।

এসময় হেলাল উদ্দিন বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উচিত দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রকৃত সত্য সংবাদ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। যে গণমাধ্যম প্রচার করছে হিন্দু ভেবে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়েছে সেই গণমাধ্যম বাংলাদেশে বসে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে সেটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। 

ওই গণমাধ্যমসহ দেশের সব গণমাধ্যমকে দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নয়তো জনগণ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের মত ওই সব গণমাধ্যমকে বর্জন ও বয়কট করবে। তিনি সকল গণমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে কাজ কাজ করার আহ্বান জানান।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও মতিঝিল-শাহজাহানপুর জোন পরিচালক সৈয়দ সিরাজুল হক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী দফতর সম্পাদক এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সমন্বয়ক আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।

টিআই/এমএসএ