বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, ত্রিপুরায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা ও দেশের চলমান সংকট নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব বিষয়ে জাতীয় সংলাপ আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের পক্ষে থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।

লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েন চেয়েছেন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। অথচ গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামের একটি সংগঠন ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। এমনকি সীমান্ত অবরোধের হুমকিসহ বাংলাদেশি সীমান্তে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে একেরপর এক বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ঘৃণা প্রচার চলছে। এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো প্রতিবাদ নেই। বরং বাংলাদেশ ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, কলকাতা উপ-হাইকমিশনে নিরাপত্তা না দিয়ে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উপহাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রদানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ও কলকাতায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত কলকাতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও জাতিসংঘে সেই প্রস্তাব করার আহ্বান করছি।

ভারতের গণমাধ্যমে বিজেপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাসহ নানা ইস্যুতে গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। এখানে কোনো ধর্মীয় বাকবিতণ্ডা ও সাম্প্রদায়িকতা নেই। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধা বজায় রেখে জীবনযাপন করছে।

গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ভয়েস অব আমেরিকা- বাংলা পরিচালিত জরিপেও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর তার ভক্ত ও অনুসারী ইসকন সদস্যরা চট্টগ্রামের আদালতে অবস্থিত মসজিদে হামলা করে এবং সরকারি সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, অপ ইন্ডিয়াসহ একাধিক গণমাধ্যমে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার এসব কর্মকাণ্ড মিথ্যাচার ও নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করেছে।

গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা আরও বলেন, সর্বশেষ গতকাল ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনে হামলা বিজেপি সরকারের অপতৎপরতার ও বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ। এই হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি। ভারতের এসব কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় আওয়ামীলীগ নিজেদের বিদায় ও পরাজয় মেনে নিতে পারলেও, স্বৈরাচার হাসিনার বিদায় ভারত মানতে পারছে না। কারণ এই দেশের বীর ছাত্র-জনতা ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৫ বছরে ধরে গড়ে ওঠা হাসিনার মসনদ ভেঙে খানখান করে দিয়েছে। যে কারণে ভারত একেরপর এক ষড়যন্ত্র করছে এবং ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও যুদ্ধ লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, এখনো সুযোগ আছে নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণ করার। একেরপর এক দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সেই স্বপ্ন বিনষ্ট করতে পারে। এমতাবস্থায় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। কিন্তু জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তি কী হবে? এখনো পর্যন্ত আমরা সেটি নির্ধারণ করতে পারিনি। শুধু চটকদার মৌখিক বক্তব্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হতে পারে না। এজন্য সরকারের তরফ থেকে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ আয়োজন করার আহ্বান জানাচ্ছে গণঅধিকার পরিষদ।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।

এসএম