অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা জনগণ সহজভাবে নেবে না : তারেক রহমান
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদক্ষতা জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের প্রায় ১৫ বছরে তৈরি করা জঞ্জাল তিন মাসে দূর করা সম্ভব না। কিন্তু তিন মাস পর সরকারের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অন্যায্য কিংবা অস্বাভাবিকও নয়। জনগণের সব দাবি পূরণ করা হয়ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার পরিচালনায় যদি অদক্ষতা পরিলক্ষিত হয়, সেটাও কিন্তু জনগণ আবার সহজভাবে মেনে না।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র মেরামতের কর্মযজ্ঞ সংস্কার করতে গিয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়টি যদি ভুল হয় তাহলে কিন্তু সেটি জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
জনগণ যা চায় তাকে অন্তর্বর্তী সরকার অ্যাড্রেস করলে ‘ওত পেতে থাকা স্বৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্রই’ সফল হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, সরকারকে একেবারে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা বসে নেই। সেটা দেশের ভেতরেই হোক বা দেশের বাইরে হোক, প্রশাসনের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক… এরা কিন্তু ওত পেতে আছে যে কীভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থা নিবিড় থাকলে তারা ষড়যন্ত্রের ডাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। জনগণ যা চাইছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সেগুলোকে অ্যাড্রেস করে তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো সুযোগ পাবে না, তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা যদি না যায় তাহলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সমস্যা আমরা যাই বলছি না কেন, কোনোটাই টেকসই হবে না। একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে ভোট প্রয়োগের অধিকার। জনগণ ভোট প্রয়োগের সুযোগ যদি না পায় তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের যে সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব সেই সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব কিন্তু সৃষ্টি হয় না।
আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে– মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, জনগণ আশা করছে যে তারা স্বচ্ছ পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে সক্ষম হবে। জনগণ নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে তাদের প্রতিনিধিদেরকে। বিশ্বাসযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট আস্থা পেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তারেক রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতরা হাসপাতাল থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছে… এটি সমগ্র দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর দৃশ্য। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার লিস্টে নেই বা কত নম্বরে ছিল।
তিনি বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার যে পদক্ষেপটি, এই বিষয়টা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যে কত নম্বরে আছে? অন্তর্বর্তী সরকারের সব কাজ হয়ত সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা কিন্তু আমাদের সবার ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের ব্যর্থতা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, এরকম একটা পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত– তারা জন আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করতে বোধ হয় চাইছেন না। বরং তারা যেটা ভালো মনে করছে সেটাই হয়ত চাপিয়ে দিতে চাইছেন।
সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দলের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলেন, কিছু মৌলিক বিষয় যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সংস্কার করে একটি উপযুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেবেন। তারা কাজ করছেন, কাজ করে চলেছেন… আমরা তাদের সমর্থন দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, গণতান্ত্রিক সমাজে বাস্তবায়িত করতে আমাদের যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো দূর করতে হবে… তার বেশি কিছু করতে গেলে সময় যত বেশি যাবে তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সমস্যাগুলো আছে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা এগুলো সংস্কার করেই আমাদের অতি দ্রুত নির্বাচনে যাওয়াটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণের।
জেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনারসহ টেক্সটাইল প্রকৌশলী নেতারা বক্তব্য দেন।
জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটে ফখরুল আলমকে সভাপতি ও রুহুল আমিন আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
এএইচআর/এসএসএইচ