বাংলাদেশে কোনোভাবেই যেন ফ্যসিবাদের পুনরুত্থান না ঘটে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, আমরা বাংলাদেশে আর কোনোভাবেই ফ্যসিবাদের পুনরুত্থান চাই না। এজন্য ছাত্র, শ্রমিক, জনতার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতেই হবে। সেজন্য আমাদের ঐক্য দরকার। আমরা যদি জনগণের স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে চাই, আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে দেখতে না চাই, তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘ভাসানীর পথ ধরে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন’ শীর্ষক সমাবেশে এ বলেন তিনি। সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা করে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।  

সাকি বলেন, বিদেশি শক্তিকে ভুল বুঝিয়ে, আবারও ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। ট্রাম্পের পোস্টার নিয়ে মিছিল করে ক্ষমতায় ফেরা যাবে না। ফ্যাসিবাদকে বাংলার জনগণ আর কখনও মেনে নেবে না।

দেশে যাতে আর কখনও ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে; সেজন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর গুরুত্বারোপও করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে সাকি বলেন, ফ্যসিস্টরা নানাভাবে এখনও ষড়যন্ত্র করছে। যার অধীনে (পার্শ্ববর্তী দেশ) স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছে, তারাও চায় যে কোনোভাবে এই দেশের ক্ষমতা যাতে তাদের হাতে থাকে। এই কারণে আমরা আপনাদের বলি, অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তি সংহত করতে হবে। অভ্যুত্থান যদি সফল করতে হয়, যে অভ্যুত্থান এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ, নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ তবে তার শক্তি আপনাদের সংহত করতে হবে। আমরা গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য, দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সংবিধান, রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার একটা নতুন বন্দোবস্ত এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন ও তার জন্য লড়াই করতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। মাওলানা ভাসানীর দেখানো পথ অনুসরণ করি। এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমিকেরা তাকিয়ে দেখুক শহীদের তালিকা। ১৬০০ এর ওপরে ছাত্র শ্রমিক শহীদ হয়েছেন। ৫০০ এর উপরে চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ৫০ হাজারের উপরে আহত। শহীদদের বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ। এদেশের শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষদের মুক্তি না এলে, জনগণের হাতে ক্ষমতা না থাকলে আর ক্ষমতা পাবে না।

জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না করলে কোনো সংবিধান গণতান্ত্রিক হতে পারে না উল্লেখ করে সাকি বলেন, আর সেই কারণেই সব রাষ্ট্র নির্মাণ জনগণের ইচ্ছার ওপরে করতে হবে। যে ঐক্যে ৫ আগস্ট সৃষ্টি হয়েছে সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের আগামী দিনের রাষ্ট্র নির্মাণ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, গণতান্ত্রিক সংবিধান ও তার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে গণসংহতি আন্দোলন লড়াই করবে। সেই লড়াইকে শক্তিশালী করার আহ্বান আমরা জানাই। আজকে বাংলাদেশের মানুষ এই সংগ্রামের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এই রাষ্ট্র নির্মাণ তারা দেখতে চায়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান নেতা বলে, গণ-অভ্যুত্থানের ওপর আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন, রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তিন মাস পার হয়েছে, এখন পর্যন্ত জানমালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, গুম খুন লুটপাট করেছে এদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ দেশকে ফোকলা বানিয়ে দিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য, মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। খেটে খাওয়া মানুষ বিপদে আছে। এসব সমস্যা সমাধান করা আপনাদের দ্বায়িত্ব। তিন মাস হয়ে গেছে, মানুষ আর বেশিদিন আপনাদের (সরকার) সময় দিবে না। অবিলম্বে মানুষ তাদের সমস্যার সমাধান চায়। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। দ্রব্যমূল্য কমান, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন। 

আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে সাকি বলেন, সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, শ্রেণি-পেশার অংশীজনদের নিয়ে একসঙ্গে বসে, রাষ্ট্রের রুপান্তর, সংস্কার, নতুন বন্দোবস্ত আর আগামীদিনের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। এটাই এখন বাংলাদেশের মানুষ চায়। মানুষের চাওয়া অনুযায়ী আপনাদের চলতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু, তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, মনির উদ্দীন পাপ্পু এবং সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, ফাল্গুনী সরকার, জুলহাসনাইন বাবু, মুরাদ মোর্শেদ, দীপক রায়, দীপক রায়, তরিকুল সুজন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অঞ্জন দাস, সৈকত মল্লিক এবং নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিত চন্দ।

এএইচআর/জেডএস