সরকার ও সাধারণ জনগণের প্রতি উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপরে হামলা করলে তাদের পতন হবে না, বরং তাদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এতে গণঅভ্যুত্থানের যে শক্তি তার বিরোধিতা করা হবে। আপনারা যদি এমন কাউকে চেনেন যারা হামলা, বিদ্বেষী তৎপরতা চালাচ্ছে তাহলে মনে করবেন তারাই পতিত স্বৈরাচারের দোসর, সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। তাদের থামানোটা আপনাদের অন্যতম বড় দায়িত্ব।

বুধবার (১৩ নভেম্বর ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাসদ (মার্কসবাদী) আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ও সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের দুইটা সাফল্য স্বীকার করতে হবে। এক, এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতন হয়েছে। দ্বিতীয়ত, রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন প্রস্তাব হচ্ছে, আলোচনা, বিতর্ক হচ্ছে এটা দ্বিতীয় সাফল্য৷ 

তিনি বলেন, আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মানুষের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে তা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন সরকারের মধ্যে পড়েছে এটা আমার মনে হয় না। সরকারের ভূমিকা এই প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে এটা বলা যায় না। দেয়ালের গ্রাফিতিগুলোর মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে সেটা সরকারের ভূমিকার চেয়ে অনেক বেশি পরিণত মনে হয়েছে। দেয়ালে যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক অবস্থা দেখা যাচ্ছে সরকারের ভূমিকার মধ্যে আমি সেটা দেখতে পাচ্ছি না।

৭১ এবং ২৪ কে একটা মুখোমুখি নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ৭১ কে ২৪ এর মুখোমুখি দাঁড় করানো বা বিপরীতে নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রবণতা। কি কারণে ৭১ থেকে ২৪ বিচ্ছিন্ন হবে? ৭১ এই জনপদের মানুষের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধের জায়গা, অভ্যুত্থানের জায়গা। জনগণের আত্মবিশ্বাসের জায়গা। এখনও ৭১ থেকেই মানুষ অনুপ্রেরণা পায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ও আমরা একাত্তরের আওয়াজ নানাভাবে শুনেছি। 

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কারণে, চাপে সংবিধানে অনেকগুলো মৌলিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংবিধানে আছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার রাষ্ট্র বহন করবে। মুক্তিযুদ্ধের কারণেই এই অধিকারগুলো সংবিধানে আছে। এসবের সঙ্গে ২৪ এর অর্জন যোগ করতে হবে। কোন কিছু বিয়োগ করা যাবে না।

আলোচনা সভায় শিক্ষক, গবেষক ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেন, রাজনৈতিক দলের ভেতরে যদি গণতন্ত্র না থাকে তবে আপনি রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক চর্চা করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা যদি একটি জাতীয় সম্পদ হয় তাহলে এটা বাজারে প্রতিযোগিতার বিষয় হতে পারে না। অন্য দেশে ৬ বছর প্রাথমিক ও ৬ বছর মাধ্যমিক শিক্ষা যদি অপরিহার্য হয়, তাহলে সেটা কেন আমরা বিনা পয়সায় দেব না। শিক্ষায় গণতন্ত্র মানে হলো- জাতীয় খরচে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পাবে। একজন শিশু সাবালক হওয়া পর্যন্ত তার সব ধরনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আমরা এটি শুধু তার পরিবারের ওপর বণ্টন করে দিয়েছি। 

নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যারা অনেকগুলো সংস্কার কমিশনও তৈরি করেছেন তাদের অধিকাংশকেই আমি চিনি। আবার কাউকে কাউকে চিনি না। যাদেরকে চিনি তাদের অধিকাংশই এই সরকারের মধ্যে একেবারে বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া এরা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি না। রাজনৈতিক না এই কারণে যে, তাদের জীবনে তারা স্বল্পমাত্রায়ও কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু তাদেরকে আমরা যে দ্বায়িত্ব দিয়েছি বা তারা যে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সেটা পুরোটাই একটা রাজনৈতিক ব্যাপার। আর যাদেরকে চিনি না তাদের সম্পর্কে আমার ন্যূনতম ধারণা নাই। এই না চেনা লোকেরা কি করবেন কি করবেন না তা নিয়ে একটা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। যাদের চিনি তারা তো উদ্বেগের মধ্যে আছেনই।

লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক জায়গায় না এনে সংস্কার বাস্তবায়ন করা যাবে না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এটি নিশ্চিত।

বাসদের (মার্কসবাদী) সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

ওএফএ/এমএ