মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ড. আবুল কালাম আজাদ (বাশার) বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম প্রতিষ্ঠান আদালত। আদালত সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয় আইনজীবীদের প্রচেষ্টায়। আইনজীবীরা যদি সমাজে ন্যায়বিচার বাস্তবায়নে আল্লাহর ভয় বুকে ধারণ করে কাজ করেন তবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান মিলনায়তনে সিরাত মাহফিলে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

প্রধান আলোচক ড. আবুল কালাম আজাদ (বাশার) বলেন, ছাত্রদের উই ওয়ান জাস্টিস স্লোগান বাস্তবায়নে আইনজীবীরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন কুরআন ও সুন্নাহর কোনো বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তিনি বৃটিশদের আইন বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যে আইন আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) এর বিধান পরিপন্থি সেই আইন দিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই তিনি কুরআনের বিধান বাস্তবায়নে আইনজীবীদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

সিরাত মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড্যাফোডিল ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক ও তারবিয়াহ্ এডুকেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোখতার হোসেন বলেন, রাসূল (সা.) আদর্শে দেশ ও জাতি পরিচালিত হলে কোনো বৈষম্য সমাজে থাকবে না। সমাজের সব স্তরে শান্তি বিরাজ করবে। তাই রাসূল (সা.) আদর্শ বাস্তবায়নে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিরাত মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান এমনভাবে রচিত হয়েছে যেখানে ইসলামের কোনো বিধি-বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আইন করা হয়েছে সাধারণ নাগরিকের জন্য। কিন্তু যারা আইন করেছেন তাদের জন্য নয়। তারা অপরাধ করেও আইনের ফাঁকা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। মানুষের তৈরি আইনে বৈষম্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহর আইনে কোনো বৈষম্য নেই। ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য বিচারের ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন এক এবং সমান। তাই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে আইনজীবীদের ভূমিকা রাখতে হবে। 

তিনি বলেন, দুনিয়াতে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালত। আর সেই আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে লড়তে হয় আইনজীবীদের। কিন্তু মানুষের তৈরি আইনে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। আদালতে না লড়ে তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী রাষ্ট্র বিনির্মাণে আইনজীবীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। কেন দিতে হয়েছে? এর কারণ মানবরচিত বিধান। ছাত্ররা যেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়েছে সেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে। 

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, খুনি হাসিনাকে ছাত্র-জনতা দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে, খুনি হাসিনার দোসরদের অপসারণ করে একটি জনবান্ধব প্রশাসন জাতিকে উপহার দিতে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নজর সেদিকে একেবারেই কম। তিনি অনতিবিলম্বে হাসিনার দোসরদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে যোগ্য ও প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান।

অনুষ্ঠিত সিরাত মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এস.এম কামাল উদ্দিন, কেরানীগঞ্জ থানা আমির অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক মন্ডল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. মাইন উদ্দিন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক কোশাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, নবাবগঞ্জ থানা আমির অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম, হাতিরঝিল থানা আমির অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান আজমি।

জেইউ/পিএইচ