ফ্যাসিবাদের সরকারের দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক বলেছেন, শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ছয়শর বেশি নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে। তাদের এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আয়নাঘরের কারিগররা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এম এ মালিকের ১৭ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এম এ মালিকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আয়োজক কমিটি।

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের নেতাকর্মীদের কঠোর পরীক্ষা দিতে হয়েছে– উল্লেখ করে এম এ মালিক বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় নেতাকর্মীরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ১৭ বছর আপসহীন সংগ্রাম করেছে। আমাদের অভিভাবক বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করেছেন। এসব ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, আজ স্বাধীন বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। শহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এ স্বাধীনতা এসেছে। ছাত্র-জনতার রক্ত-ত্যাগের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা এসেছে এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো একা এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না। দেশের আপামর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, আজ ইউরোপে-যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। এমনকি পাশের দেশ ভারতেও গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। অথচ তারাই (ভারত) আবার আমাদের দেশে স্বৈরাচার, একনায়ক সরকারকে প্রমোট করে। এগুলো আমাদের দমিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বারবার সংগ্রাম করেছে। আমাদের দমিয়ে রাখা যায় না।

সভায় বিএনপির সহ সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, শেখ হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। খুনি হাসিনা আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমাদের বড় ভাই ইলিয়াস আলীসহ ছয়শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তাদের খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদী সরকারের এসব হত্যা গুম নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, এম এ মালিক দেশনায়ক তারেক রহমানকে দীর্ঘ ১৭ বছর আগলে রেখেছেন। শেখ হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিএনপির গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা বলেন, মালেক ভাই দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশে এসেছেন। আপনাকে বাংলাদেশের মানুষ ধারণ করে। কারণ উনার যে সাহস এবং সুদূর প্রবাস লন্ডনে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের উনার যে ভূমিকা, একইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতকে যেভাবে শক্তিশালী করেছেন এবং আমরা যে দীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অত্যাচার ভুগেছি সেখানে উনি সবসময় আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শেখ হাসিনা যখনই যুক্তরাজ্যে এবং কানাডায় গিয়েছেন বা ইউরোপের যেখানেই গিয়েছেন সেখানে মালেক ভাই আগে গিয়ে এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে প্রতিহত করার জন্য সর্ব অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি বলেন, হাসিনা সবসময় বলত যুক্তরাজ্য বিএনপির কারণে আমি কখনোই কর্মসূচি ভালো করে করতে পারিনি। মালেক ভাইয়ের কারণে তিনি সবসময় বাধার মুখে ছিলেন। বিশেষ করে ফেসবুকের কল্যাণে সারা বাংলাদেশের মানুষ এটি দেখেছেন।

তাহসিনা রুশদী লুনা বলেন, আজ আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি ঠিকই। কিন্তু আমরা যে প্রত্যাশা করেছিলাম, স্বৈরাচারমুক্ত হলে গুমের বিষয়ে আমরা ফয়সালা পাব। আমার স্বামী ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির যে ছয়শ নেতা গুম হয়েছিলেন তাদের কোনো অবস্থান আমরা জানতে পারিনি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে দুই মাসের অধিক সময়। তারা একটি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু সেই কমিশনের কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ আমরা কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।

ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি এতদিন যাবত এই গুমের এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল। তাদের দু’একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো প্রকার ইন্টারোগেশন করা হয়নি। তাদের কাছ থেকে বর্তমান সরকারের এটাও বের করা সম্ভব হয় নাই যে, গুম করা নেতাদের অবস্থান কি, কোথায় আছে তারা। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব অবশ্যই তাদের ইন্টারোগেশনের মাধ্যমে সব জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য। এই গুমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানাচ্ছি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ ড. ফারদিন ইসলাম, মানবাধিকার সমিতি চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।

ওএফএ/এসএসএইচ