বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, গণমানুষের তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণতন্ত্রের স্বপক্ষে নাকি ফ্যাসিবাদ কায়েম করে যিনি গণহত্যা চালিয়েছেন, গণতন্ত্র হত্যা করেছেন, স্বাধীনতা বিপন্ন করেছেন তার পক্ষ নেবে।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে সীমান্তে  হত্যা বন্ধ, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা শুধু আজকে হচ্ছে তা না, বরং দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মানুষ নিরাপত্তা চাইবে এটা স্বাভাবিক। বাংলাদেশি যেসব নাগরিক হত্যা করা হয় তারা বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই থাকে।

কোনো প্রকার সতর্ক ছাড়া তাদের নির্বিঘ্নে হত্যা করা হচ্ছে, এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা বন্ধ করতে হবে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সীমান্তে এরকম বর্বরতা নাই। যেটা আমাদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র যারা বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয় তারা এটা করছে। 

তিনি বলেন, সীমাহীন লুটপাট, গণতন্ত্র হত্যা, নির্বিকারে মানুষ হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। গত এক দেড় বছর ধরে নয়, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীসহ যারাই অধিকার আদায়ের কথা বলেছে তাদের হয় গুম করেছে, তা না হলে হত্যা করেছে, মামলা দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের (নেতাকর্মী) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এত টাকা সরিয়েছে বিশ্বে অন্য কোনো রাষ্ট্রে বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নজির নাই। এই টাকাগুলো বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে এবং অন্য দেশে পাচার করা হয়েছে। 

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, গণমানুষের তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণতন্ত্রের স্বপক্ষে নাকি ফ্যাসিবাদ যিনি গণহত্যা চালিয়েছে, গণতন্ত্র হত্যা করেছে, স্বাধীনতা বিপন্ন করেছে তার পক্ষ নেবে।

তিনি বলেন, আমরা বিস্মিত হয়েছি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমেরিকারসহ বেশ কয়েকটি দেশ বৈঠক করেছে। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, যারা আমাদের বন্ধু দাবি করে তারা পালিয়ে এসেছে ড. ইউনূস সাহেবের সঙ্গে বসে নাই। তার মানে তারা গণতন্ত্রের সঙ্গে বসে নাই। যে দেশ ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে। ৯০ -এ, ২০২৪ সালে গণতন্ত্রের জন্য, দাবি আদায়ের জন্য রক্ত দিতে পারে তার পক্ষে তারা (ভারত) দাঁড়ায় নাই। 

অর্থ লুটপাটকারীদের হুঁশিয়ার করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ লুটপাট করে যারা বিদেশে পাচার করেছে সেই টাকা যেখানেই থাক, সাগরের নিচে অথবা শেখ পরিবারের অথবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর কাছে ভালোই ভালোই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ টাকা ফেরত পাঠান। এ টাকা দেশের জনগণের। খেটে খাওয়া মানুষের এই টাকা যতক্ষণ না পর্যন্ত উদ্ধার হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কারো সঙ্গে আপস নাই।

কৃষক দলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, হাসিনা আন্দোলন করবে নাকি নির্বাচন করবে, এটা তার ব্যাপার। বাংলাদেশের মানুষ কখনো হত্যাকারীকে ছাড় দেয় নাই। এদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের কাছে কখনো মাথা নত করে নাই। যারা পালিয়ে গেছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে।

দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ইমরান সালেহ প্রিন্স, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, কৃষকদলের নেতা সাদি, মোখতার আকন্দ প্রমুখ।

ওএফএ/এসএম